Posted by : Md:Joy Chowdhury Jul 29, 2013

ঢাকা: পড়াশুনা করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই প্রযুক্তির দিকে ছিল প্রচ- ঝোঁক। আর এ থেকেই হয়ে উঠেন প্রযুক্তিবিদ। প্রযুক্তি নির্ভর চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে এই প্রযুক্তি তার কাল হয়ে দাঁড়ায়।
সাধারণ মানুষের জমানো ব্যাংকের টাকা জাল কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে নিয়ে এখন তিনি সবার আলোচনায়। জালিয়াতির এই চক্রকে আটক করার পর মূল হোতা সেলিমের ব্যাপারে জানা গেছে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে জালিয়াতি করে টাকা উঠানোর বিশদ বর্ণনাও দিয়েছেন। সেলিম ও তার চক্রের বাকি সদস্যদের কারিগরি প্রতিভায় রীতিমতো বিস্মিত হয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও। বিশেষ করে মো. সেলিমের প্রতিভা বিস্ময়কর।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সেলিম অপরাধী হলেও অতীতের কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি অনুতপ্ত। কাড়িকাড়ি টাকা জালিয়াতি করলেও তার ঘরের চুলায় আগুন জ্বলে না। মাদকের পেছনেই তিনি ৯০ ভাগ টাকা খরচ করেছেন। তার স্ত্রী-সন্তানরা প্রায়ই না খেয়ে থাকে।

তিন দিন রিমান্ডের প্রথম দিন শেষে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে এসব কথা বলেছেন ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড জালিয়াত চক্রের মুল হোতা মো. সেলিম।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বাংলানিউজকে বলেন, পড়াশুনা শেষ করে ১৯৯৫ সালে সাইটেক নামের একটি কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি প্রকৌশলী হিসেবে সেলিম প্রথম যোগদান করেন। এরপর ডাচ-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংকের এটিএম সেবার কাজ করতেন। ২০০০ সালে টেক্সাস ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে কর্মকর্তা পদে এটিএম সেবার রক্ষাণাবেক্ষণ ও দেখাশোনার কাজ শুরু করেন।
তিনি চাকরিতে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যে ওই কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ‘আমরা টেকনোলজি’ করা হয়। নতুন ম্যানেজমেন্ট এসে লোক ছাঁটাই করতে থাকে। এই অবস্থায় তার যোগ্যতা বিচার না করে অন্যায়ভাবে ছাঁটাই করা হবে জানতে পেরে খুব কষ্ট পান।
এক পর্যায়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বেকার হয়ে পড়েন। কিছুদিন চাকরির জন্য চেষ্টা করেন। এভাবে স্ত্রী সন্তান নিয়ে  খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতে থাকে। এক সময় তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।

সেলিম গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বলেন, ২০১২ সালের রমজান মাসে পলওয়েল মার্কেটের এটিএম বুথের পিনকোড সংগ্রহ করেন তিনি। ওই ডাটা দিয়ে তিনি আরো ৫০টি নকল কার্ড তৈরি করেন। এর মধ্যে সহকারী আরিফকে ৩০টি কার্ড দেন তিনি।
বাকি ২০টি কার্ড নিজের কাছে রেখে আরো ১৩ লাখ টাকা বুথ থেকে জালিয়াতি করে উঠান তিনি। সব মিলে সহযোগী আরিফ মঞ্জুরুল, আসাদ ও লালনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ব্যাংকের এটিএম বুথ জালিয়াতি করে তিনি ৫৫ লাখ টাকা টাকা উঠান।

গ্রেপ্তার হওয়া আরিফ হোসেন খান বর্তমানে এডিএন (অ্যাডভান্স ডেটা নেটওয়ার্ক টেকনোলজি) নামের প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে ২০১০ সাল থেকে কাজ করছেন। আসাদুল ইসলাম ২০০৯ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের অফিসার পদে চাকরি করতেন।

ডিবি জানায়, পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে তরুণ বিজ্ঞানী সেলিমসহ অন্যরা বিভিন্ন ব্যাংকের তথ্য চুরি করে ভুয়া ক্রেডিট কার্ড বানিয়ে ব্যাংকের গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা তোলে নিতেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে তারা বলেছেন, যে প্রযুক্তিতে তারা এটিএম বুথ থেকে টাকা উঠাতেন সেই প্রযুক্তি বাংলাদেশে কেউ আর জানে না। সেহেতু ব্যাংকের বুথ থেকে কেউ আর এভাবে টাকা উঠাতে পারবে না। এছাড়া গ্রাহকদের টাকা এভাবে চুরি হওয়াতে ব্যাংকগুলো এখন আরো সতর্ক। পূর্বে এটিএম বুথে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার হতো এখন তারচেয়ে বেশি শক্তিশালী।

কর্মকর্তারা বলেন, সেলিম দাবি করেন তার কাছে এটিএম বুথের সর্বশেষ এবং লেটেস্ট প্রযুক্তি রয়েছে। এটা ব্যবহার করলে এটিএম শতভাগ নিরাপদ থাকবে। এটিএম বুথ পরিচালনাকারী কোনো আইটি বিশেষজ্ঞও টাকা উঠাতে পারবে না।

ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃতরা এটিএম বুথের সিপিইউ  থেকে পেনড্রাইভের মাধ্যমে কাস্টমারের তথ্য ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরার মাধ্যমে পাসওয়ার্ডের পিনকোর্ড চুরি করে কার্ড রিডার ও রাইটারের মাধ্যমে ল্যাপটপের সাহায্যে সংগৃহীত তথ্য কাজে লাগাত।
এরা ব্যাংকের আসল এটিএম কার্ডের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপে ধারণ করে নতুন কার্ড তৈরি করে সেটি দিয়ে ক্লোন কার্ড ও  গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা পাসওয়ার্ড দিয়ে ব্যাংক থেকে থেকে টাকা তুলত।

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

- Copyright © Personal Blog - Tips Guru - Powered by Md Joy - Designed by Md Joy Chowdhury -