Posted by : Md:Joy Chowdhury Jul 29, 2013

ঢাকা: কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলকে ‘জলদস্যু’দের মুক্তাঞ্চলে পরিণত করেছেন একজন রহিমা খাতুন। উপকূলবর্তী মানুষের কাছে তিনি দস্যুরানি নামেই খ্যাত। তার জন্ম এক বিখ্যাত ডাকাত পরিবারে। তাকে নিয়ে ওই এলাকায় নানা অতিকথা (মিথ) প্রচলিত।

ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় রহিমার হাত প্রশাসনের নানা পর্যায়ে বিস্তৃত। সাপ্তাহিক মাসোহারার বিনিময়ে পুলিশকে বশ করেছেন তিনি। তাই কেবল রাত নয়, দিনের আলোয় জনসম্মুখেও চলে তার ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনা। আর সবার সামনেই লুটের মালামাল ট্রাকে চাপিয়ে চট্টগ্রামে বিক্রির জন্য নিয়ে যান তিনি।

গত ২৬ মার্চ গভীর সাগরে তিনটি মাছ ধরা ট্রলার লুটপাট করে ৩২ জেলেকে সাগরে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেয় রহিমা খাতুনের দল। সর্বশেষ পর্যন্ত যার ২৪টি লাশ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বাংলানিউজের পক্ষ থেকে জানার চেষ্টা করা হয়, কে এই রহিমা খাতুন। আর এ চেষ্টায় উঠে এসেছে রহিমার অজানা জগতের নানা খণ্ডচিত্র। পাঠকের জন্য ভয়ংকর এই দস্যুরানীর তথ্য তুলে দেওয়া হলো-

চট্টগাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের কুতুবখালী গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর মেয়ে রহিমা খাতুন। বাবা মোহাম্মদ আলী ছিলেন সামান্য লবণ চাষী। অবসর সময়ে তিনি সাগরে চিংড়ি পোনা আহরণ করতেন।

রহিমার আপন বড় ভাই আব্দুল হাকিম (বাইশ্যা ডাকাত) উপকূলীয় অঞ্চলের ত্রাস হিসেবে ‘খ্যাতি’ রয়েছে। অন্য দুই ভাই জাফর ও বেত্তা ডাকাতও বহু মামলার আসামি। রহিমার স্বামী মোক্তার আহমদ ও ভাই বেত্তা বর্তমানে একাধিক ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় কারাগারে আছেন। অপর দুই বোন জামাই ভুলাইয়া ডাকাত ও নুরুল কাদেরের আছে ডাকাতিতে কুখ্যাতি। ভাগিনা বাহাদুর নিজেই ছোট খাট এক জমদূত। এই পরিবারের সকল সদস্যদের বিরুদ্ধেই আছে একাধিক হত্যা, খুন, গুম, অস্ত্র ও লুটপাটের মামলা।

এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে মহেষখালীর একাধিক ডাকাত বাহিনীর সদস্যরা। এদের মধ্যে লালাইয়া, এনাম চেয়ারম্যান, মিন্টু, কুতুব দিয়ার ওসমান গনি, বাদশা, দিদার, পেকুয়ার ইসমাইল, বাশঁখালীর আলী হোসেন, আঙ্গুল কাটা জব্বারসহ বিভিন্ন দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দারেরা। রহিমার নেতৃত্বে এরা গঠন করেছে ভয়ংকর এক দস্যু সাম্রাজ্য। হাতিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমগ্র সমুদ্র উপকূল এদের দখলে। মাছধরা থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহন, এমনকি সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া, মহেষখালী চ্যানেলের সব নৌযানই রহিমা খাতুনকে কর দিয়ে চলাচল করে।

কিন্তু কিভাবে একটি সাধারণ পরিবারের এই বাঙালি মেয়ে হয়ে উঠলো ভয়ংকর ‘দস্যুরানি’? এই প্রশ্নের উত্তর খুজঁতে গিয়ে দেখা গেল মৃত মোহাম্মদ আলির বড় ছেলে রহিমার বড় ভাই আব্দুল হাকিমের (বাইশ্যা ডাকাত) ছিল একটি ছোট ফিশিং বোট। এ দিয়েই সে তার ভাইদের নিয়ে সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু আস্তে আস্তে এ পরিবারের সদস্যরা মাছ ধরা বাদ দিয়ে উপকূলে নৌ-ডাকাতি শুরু করে। গড়ে ওঠে এদের নিজস্ব ডাকাত বাহিনী। এই বাহিনীরই এক সদস্য মোক্তার আহমদের সঙ্গে বিয়ে হয় রহিমা খাতুনের। এভাবেই নিজেও এ পেশায় জড়িয়ে পড়েন রহিমা। সময়টা বিংশ শতকের শেষ দিকে। কিন্তু তার ভয়ংকর রূপে আবির্ভাব অপারেশন ক্লিনহার্টের পর।

চারদলীয় জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে অপারেশন ক্লিনহার্ট শুরু করলে নিজ আস্তানায় বেশ কয়েক জন সঙ্গী সমেত ধরা পড়েন রহিমার বড় ভাই দস্যু সম্রাট আব্দুল হাকিম ওরফে বাইশ্যা ডাকাত। এরপর ভাইদের অবর্তমানে দলের হাল ধরেন রহিমা খাতুন। আর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপর ভাইরাসহ সকল সদস্য জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এসে যোগ দেয় তার দলে।

অভিযোগ আছে, প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে হাত আছে তার। নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই ডাকাতির সাম্রাজ্য রক্ষা করে চলেছেন তিনি। এ কাজে সহায়ত করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হারুন অর রশীদ (সাবেক ইউপি মেম্বার)। চার দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যান। আবার এই সরকার ক্ষমতায় এলেই দেশে এসে হাত মেলান রহিমার সঙ্গে।

এছাড়া রহিমার আশ্রয়দাতার তালিকায় আছে নুরুর ছাফা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী নুরুল কাদেরের নাম। নুরুল কাদের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হলেও বহু অবৈধ অস্ত্রের মালিক তিনি। রহিমার বাহিনীর কাছে এসব অস্ত্র ভাড়া দিয়ে লুট ও ডাকাতির মালের ভাগ নেন।

স্থানীয়দের মতে, এ অঞ্চলে রহিমা ডাকাতের মুক্তাঞ্চলের ঘটনা এলাকায় ওপেন সিক্রেট। সে ও তার পরিবারের সদস্যদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জল ডাকাত বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। অথচ কেউই মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত পায় না।

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

- Copyright © Personal Blog - Tips Guru - Powered by Md Joy - Designed by Md Joy Chowdhury -