Posted by : Md:Joy Chowdhury Sep 14, 2013




জয়পুরহাট থেকে: এবার কিডনি বিক্রি দেশে নয়, কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য দালালের মাধ্যমে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিডনি বিক্রেতাদের।

দু’বছর পর আবারো নতুন দালালদের মাধ্যমে জয়পুরহাটের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে কিডনি  বিক্রির ব্যবসা শুরু হয়েছে। ছয় মাসে জেলার কালাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ২০ জন  কিডনি বিক্রি করেছে।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা যায় কিডনি বিক্রির চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের মে ও জুন মাসের কিডনি বিক্রির খবরে এলাকার হত দরিদ্র মানুষের বেশ কয়েকটি পরিবারের প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ টাকার লোভে পরে নিজের শরীরের মুল্যবান কিডনি বিক্রি করে দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছিলেন। সে সময় স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় কিডনি কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করার পর দুই বছর বন্ধ ছিলো,কিছু দিন থেকে আবারো এলাকায় তৎপর হয়েছে এ চক্রটি ।

জানা যায়, দেশের যে হাসপাতাল গুলোতে  কিডনি প্রতিস্থাপনের কাজ করা হতো জয়পুরহাঁটের কিডনি নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড  ঘটে যাওয়ার  পর সে সমস্ত হাসপাতালে এখন আর কিডনী প্রতিস্থাপনের কাজ করছেনা। আর তাই দালাল চক্রটি দেশ ছেড়ে এখন ভারতের  ব্যাঙ্গালোরের  কলম্ব এশিয়া হসপিটাল, ব্যাংককে বামরুনগ্রান্থ হসপিটাল, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল হসপিটালে কিডনি বিক্রেতাদের নিয়ে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাম ঠিকানা পরিবর্তন করে পাসপোর্ট তৈরি করে ভুয়া ডাক্তারি ব্যাবস্থাপত্র নিয়ে চিকিৎসার নামে দালাল চক্রের খপ্পরে পরে বিদেশে গিয়ে কিডনি বিক্রি করে দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।  
এদের মধ্যে কালাই উপজেলার উলিপুর গ্রামের বাসিন্দা আজাদুল (৩৭)। পাসপোর্টে তার প্রকৃত নাম ও ঠিকানার পরিবর্তন করে ব্যবহার করা হয়েছে মো. আজাদ হোসেন।
স্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয়েছে- জাপান গার্ডেন সিটি মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
জোসনা বেগম (৩৬), কালাই বোড়াই গ্রামের বাসিন্দা ।  পাসপোর্টে ও ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্রে তার প্রকৃত নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে নতুন নাম ব্যবহার করেছেন মাহফুজা বেগম,
স্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয়েছে- ছোলমাইদ, গুলশান, ভাটারা, ঢাকা-১২১২।

এই দুই জনের কিডনি বিক্রির জন্য দালালরা ভারতে নিয়ে গিয়েছিলো, ভারতের  ব্যাঙ্গালোরের  কলম্ব এশিয়া হসপিটালে তাদের কিডনি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয় গত জুন মাসে। কীভাবে দালালরা তাদের নিয়ে গিয়েছে বা কত টাকা  দিয়েছে সে ব্যাপারে তারা মুখ খুলতে রাজি নন।

কালাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গত ৬ মাসে যারা কিডনি বিক্রি করেছেন তারা হলেন-বড়াই গ্রামের বেলাল উদ্দীন ও তার স্ত্রী জোসনা বেগম (৩৫), উলিপুর গ্রামের আজাদুল ইসলাম (৪০) ও ছারবানু (৩৮), কুসুম সাড়ার মোস্তফা (৪৩), জয়পুর বহুঁতি গ্রামের গোলাম হোসেনের মেয়ে শাবানা (৩৭) ও খাদিজা (৪০), শিমরাইল গ্রামের ছাকোয়াত (৪৫) ও এনামুল (৩৪), ফুলপুকুরিয়া গ্রামের মুসা (৩৮), সুড়াইল গ্রামের সাইফুল (৩৫) এবং কালাই পৌরসভার থুপসাড়া গ্রামের  বিপ্লব হোসেন ফকির (৩৯)।

এছাড়াও কিডনি বিক্রি উদ্দেশে নিরুদ্দেশ রয়েছে জয়পুর বহুঁতি গ্রামের জাহেদা বেগম (৩৪) ও বায়েজিদ (৩৮), পাইকপাড়ার সাইদুর (৩৬), দূর্গাপুরের সুজাউল (৩২) সহ বেশ কয়েকজন।
নারায়ণগঞ্জের দালাল মকবুলের মাধ্যমে ভারতে কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে দর দামে বনিবনা না হওয়ায় দেশে ফিরে এসেছে দূর্গাপুরের পল্লী  চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

উলিপুর গ্রামের কিডনি বিক্রেতা আবুজারের ছেলে আজাদুল (৩৪) বাংলানিউজকে বলেন, অভাবের পরি যখন চলা পাচ্চিলাম না তখন ওই দালালেক ধরি হামি (আমি) কিডনি বেচি দেই, তবে কার কাছে তিনি কিডনি বিক্রি করেছেন না বললেও তিনি একজন নাম করা চিত্রনায়কের স্ত্রী বলে তিনি জানান।

সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে কিডনি ডোনেট করে এবং কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়।  সে চুক্তি অনুযায়ী তারা আজাদুলের  ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বাবদ  প্রতিমাসে ৮ হাজার করে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে।

২০১১ সালের মে ও জুন মাসে কিডনি বেচা-কেনার খবরে দেশ জুড়ে চাঞ্চল্যের পর এ চক্রের মূল হোতা ঢাকার তারেক আজম ওরফে বাবলু চৌধুরী, নাফিজ মাহমুদ, মাহমুদ ওরফে সুজন, বাগেরহাটের সাইফুল ইসলাম দাউদ ও স্থানীয় দালাল বহুতি গ্রামের আব্দুস ছাত্তারসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছিলো পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৬ জন এই চক্রের সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে  আদালতে জবানবন্দিও দেয়। এদের অনেকে ঢাকার নামকরা একাধিক হাসপাতাল ও স্বনামধন্য চিকিৎসকদের জড়িত থাকার কথাও অকপটে স্বীকার করেছিলো।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৩

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

- Copyright © Personal Blog - Tips Guru - Powered by Md Joy - Designed by Md Joy Chowdhury -