Posted by : Md:Joy Chowdhury Oct 1, 2014

কেনিয়ার নাইরোবির ওয়েস্টগেট শপিংমলে গত সপ্তাহের সন্ত্রাসী হামলার কথা বিশ্ববাসী কমবেশি শুনেছে। মিডিয়ার কল্যানে মানুষ জেনেছে কিভাবে সন্ত্রাসীরা শপিং মলের ভেতর একের পর এক নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মেরেছে। কি নারী, কি পুরুষ, শিশু কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক; কোনো বাছবিচার করেনি সন্ত্রাসীরা। সামনে যাকেই পেয়েছে তাকে মেরে লাশের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। সন্ত্রাসীদের এই রক্তপিপাসার মধ্যে কেনিয়ার একজন রেডিও উপস্থাপিকা উপস্থিত বুদ্ধির জোরে মৃত্যুকে ফাঁকি দিতে পেরেছেন। নইলে তাকেও আজ থাকতে হতো নিহতদের তালিকায়। স্রেফ বুদ্ধির জোরে বেঁচে যাওয়া ওই রেডিও তারকার নাম স্নেহা কোঠারি মাশরু। ভারতীয় বংশোদ্ভুত এই তরুণী চারদিনব্যাপী ওই হামলার পর জীবিত বের হয়ে আসেন। পরে বাইরের দুনিয়াকে তিনি জানিয়েছেন কিভাবে সন্ত্রাসীদের উদ্ধত বন্দুকের নল থেকে তিনি রেহাই পেয়েছিলেন।

রক্তপিপাসুরা একের পর এক গুলি ছুড়তে ছুড়তে সামনে আসছে। স্নেহা বাঁচার জন্য িগ্বদিক ছুটছেন। তার মতো ছুটছে আরো অগণিত মানুষ। চোখের সামনেই গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ছে একজনের পর অন্যজন। স্নেহা সামনে তাকিয়ে দেখেন দুই বন্দুকবাজকে। দৌঁড়ে পলায়নরত মানুষগুলোকে লক্ষ্য করে ঠান্ডা মাথায় গুলি ছুড়ছে। এক কিশোরী সিড়ির আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু পুরো শরীরটা লুকাতে পারলো না। এক সন্ত্রাসী ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে গেল। ঠান্ডা মাথায় বন্দুকটা তাক করলো। এরপর বন্দুকের আওয়াজ। তারপর রক্তের স্রোত।

স্নেহা একটি পিলারের আড়ালে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসীদের এই নিষ্ঠুরতা দেখলেন। তার সামনের ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে অনেকের রক্তমাখা দেহ। দেখলেন বন্দুকধারী এক সন্ত্রাসী ওই পিলারের দিকেই এগিয়ে আসছে। স্নেহা বুঝলেন এবার সব শেষ। পিলারের আড়ালে নিজেকে লুকানো সম্ভব নয়। মুহুর্তে মনে পড়ে গেল স্বামী এবং শিশুপুত্রের মুখ। তাদের জন্য বাঁচতে খুব ইচ্ছা করল তার। কিন্তু সেটা যে আর সম্ভব নয় তা বুঝতে পারলেন। মৃত্যুদূত একটু একটু করে এগিয়ে আসছে সামনে। তিনি সামনে তাকিয়ে দেখেন একটি কিশোর ছেলে বাঁচার জন্য দৌঁড়ে তার দিকেই আসছে। কিন্তু তাকে দেখেই গর্জে উঠল এক সন্ত্রাসীর বন্দুক। মুহুর্তেই ছেলেটি লুটিয়ে পড়লো স্নেহার সামনে এসে। ছেলেটি ছটফট করতে লাগলো আর রক্তের ফোয়ারা ছুটতে লাগলো তার পিঠ দিয়ে। স্নেহা ভাবলেন এবার তার পালা।

হঠাত্ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। তিনি ছেলেটির শরীর থেকে দুই হাতে রক্ত নিয়ে নিজের দুই হাতে মাখলেন। ছেলেটি তখনো ছটফট করছে। এমন আহত একটি ছেলের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে শরীরে মাখতে গিয়ে নিজেকে প্রচন্ড স্বার্থপর মনে হলো স্নেহার। এমন সময় ছেলেটির মোবাইল ফোন বেঁজে উঠলো। স্নেহা বুঝলেন মোবাইলের রিংটোন শুনে সন্ত্রাসীরা বুঝি সেদিকে ছুটে এসে তাকে হত্যা করবে। কিন্তু তিনি দ্রুত ছেলেটির প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটি বের করে সুইচ অফ করে দিলেন। রিংটোন থেমে গেল। কিন্তু স্নেহা বুঝতে পারলেন সেই সাথে ছেলেটির জীবনপ্রদীপও নিভে গেল! স্নেহা তখন আর ইতঃস্তত না করে তার বুক থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত দুই হাতে নিয়ে সারা মুখে ও পায়ে মাখলেন। এরপর মাথার চুলের খোপা খুলে চুল দিয়ে মুখ ঢেকে মরার মতো করে শুয়ে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর শরীরের কাছে এক সন্ত্রাসীর অস্তিত্ব বুঝতে পারলেন। কিন্তু সে স্নেহাকে মৃত মনে করে তার দিকে গুরুত্ব দিল না। তার মাথার পাশে দাঁড়িয়েই সে গুলি করে ফেলে দিল আরেক বৃদ্ধকে। এরপর সে হেটে অন্যদিকে চলে গেল।

বেঁচে গেলেন স্নেহা। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এই গল্প তিনি শুনিয়েছেন গোটা বিশ্ববাসীকে। স্টান্ডার্ড ডিজিটালের সাথে সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন তার বেঁচে থাকার এই অবিশ্বাস্য গল্প। তার কাছে মনে হচ্ছে, দ্বিতীয়বার জন্ম হয়েছে তার। স্নেহা বিশ্বাস করেন, সেই কিশোরটি তার সামনে গুলিতে লুটিয়ে পড়ে না মরলে বাঁচতে পারতেন না তিনি। তাই তিনি জানার চেষ্টা করছেন কে ছিল সেই হতভাগ্য কিশোর। নিহত ছেলেটির ঋণ তিনি কোনোদিন শোধ করতে পারবেন না। একটি ফুল দিয়ে অন্তত একটু সম্মান জানাতে চান।

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

- Copyright © Personal Blog - Tips Guru - Powered by Md Joy - Designed by Md Joy Chowdhury -