Posted by : Md:Joy Chowdhury Oct 1, 2014

মাথার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ি; সাঁই সাঁই করে, বিকট শব্দে। মানুষের হাক ডাক আর চিৎকার চেঁচামেচিতো আছেই। ধুলোবালির কথা না হয় বাদ গেলো। আর কাঁথা-বালিশ- ওসব স্বপ্নে থেকে যাক। ছাদ হিসেবে আকাশই তো যথেষ্ট! তবুও একটু ঘুমানো চাই। রাত হয়েছে অনেক।

রাজধানীতে যাদের ঘুমানোর কোনো জায়গা নেই, ফুটপাতই তাদের উপযুক্ত স্থান। একপাশে কুকুর বসে ঝিমায়, অন্যপাশে দিব্যি ঘুমায় মানুষ। এরা দিন মজুর, ভিক্ষুক আর ছিন্নমূল। কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। শেষ পর্যন্ত ফুটপাতই বেছে নেয় একটুখানি চোখ বুঁজে জিরোবার জন্যে।

কিন্তু এতেও বিপত্তি কম না। মশার উৎপাত, বৃষ্টি এলে তো নির্ঘুম কাটাতে হয়। সাথে দারোয়ান, পুলিশের বখরা তো আছেই। তবুও একটু ঘুমানো চাই।

বৃহস্পতিবার রাত তখন দেড়টা। কাওরান বাজারের ঠিক উল্টোদিক। সারিবদ্ধভাবে ঘুমোচ্ছে মানুষগুলো। মাথার নিচে হাত রেখে বালিশের কাজ সেরেছে অনেকে। কেউ কেউ খুঁজে আনা ইট কিংবা সঙ্গে থাকা ব্যাগকেই বালিশ হিসেবে ব্যবহার করছে। আর যাদের এসবও নেই, তারা বালিশহীন অবস্থাতেই পাড়ি জমিয়েছে ঘুমের দেশে।

এসব যেন তাদের জন্য কোনো বাধাই নয়। বড় বাধা হচ্ছে বৃষ্টি আর বখরা চাইতে আসা (অ)মানুষগুলো। মাঝরাতে লাঠির গুঁতো দিয়ে ঘুম ভাঙে। দশ টাকা হাতের মুঠোয় গুঁজে দিলেই সব ল্যাঠা চুকে যায়। আর এতে যাদের আপত্তি, তাদের ঘুম সে রাতের জন্য হারাম।

কথাগুলো জানিয়েছেন মধ্যবয়সী সোলায়মান মুন্সী। রংপুরের মিঠাপুকুর থানায় বাড়ি। ঢাকায় এটা সেটা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। চরম ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘টাকা পাইলে সব ঠিক, না হয় ঘুমাতেও দ্যায় না।’

‘দে ট্যাকা দে’ আওয়াজটা তখনই কানে এলো। ফিরে তাকানোর আগেই ‘ঠাস’ করে আরও একটা শব্দ পেলাম। একটি বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানির পোশাক পরা এক গার্ড শাসাচ্ছে কয়েকজনকে। যেনো ওর বহুদিনের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ধমকাচ্ছে।

একটু সামনেই পুলিশের একটি গাড়ি দাঁড়ানো। এক পুলিশ সদস্যও দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছেন। ‘কিরে হয় নাই?’ বলে পুলিশটি তাড়া দিলেন সিকিউরিটি গার্ডকে অথবা লোকটিকে। ততোক্ষণে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেলো, এ সিকিউরিটি গার্ডের কণ্ঠে এতো জোর ধমক কোত্থেকে আসে!

সদ্য ঘুম থেকে ওঠা মানুষগুলো যেনো ‘ভূত’ দেখার মতো আঁতকে উঠে কোমরে গুঁজে রাখা ভাঁজ করা টাকা থেকে দশ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কোনো প্রতিবাদ নেই। কীসের টাকা, সে হিসাব জানারও প্রয়োজন বোধ করেনি কেউ। উল্টো যোনো দশ টাকা দিয়ে রেহায় পেলেই বাঁচে।

অন্তত একশ জনের কাছ থেকে এ টাকা উঠানোর কাজটি সুন্দরভাবেই সারলেন গার্ড। টাকা গুনে নিয়ে যেতে যেতে বলেও বসলেন, ‘ট্যাকা না দিয়া ঘুমাইবি? তোর বাপে দিবো ট্যাকা।’

কার বাবার জায়গায় কে যে টাকা তোলে বিষয়টা নিয়ে তখনই লেগে গেলো খটকা। তখনই উক্তিটির চরম বাস্তবতা আনমনে ভেসে এলো- জোর যার মুল্লুক তার।

পুলিশের গাড়িটির ইঞ্জিন গর্জে উঠলো। কনস্টেবল আগে থেকেই বুকের নেমপ্লেট খুলে রেখেছেন। তাই নামটা উদ্ধার করা যায়নি। গার্ডের কাছ থেকে নিজের মতো করেই বুঝে নিলেন টাকাগুলো। এ যেনো নিয়মিত দায়িত্বেরই অংশ। গার্ডের হাতেও কিছু টাকা গুঁজে দিতে ভুল করলেন না।

পুলিশের গাড়ি চলে গেলো। গার্ড তখনই বলে উঠলেন, ‘সব শালা ধান্দাবাজ। তুইলা দিলাম এক হাজার ট্যাকাআর আমারে দিলো ৫০ ট্যাকা। শালা পুলিশের জাতই...(উচ্চারণ অযোগ্য)।’

এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে জানা নেই। তবে দশ টাকা দেয়ার পর মানুষগুলোর ঘুমে আর কোনো ব্যাঘাত হবে না এটাই এই মুহূর্তে একটু প্রশান্তি দিল!

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

- Copyright © Personal Blog - Tips Guru - Powered by Md Joy - Designed by Md Joy Chowdhury -