বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বাংলাদেশের ৭ টি বিভাগের ৬৪ টি জেলার নামকরণের ইতিহাস সংক্ষেপে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হল।
১. বরিশাল বিভাগ ২. চট্টগ্রাম ৩. ঢাকা ৪. খূলনা বিভাগ ৫. রাজশাহী বিভাগ ৬. রংপুর ভিভাগ ও ৭. সিলেট বিভাগ।

১। বরিশাল বিভাগঃ-
বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে। বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠী, পটুয়াখালি, পিরোজপুর ও ভোলা এই ৬ জেলা নিয়ে বরিশাল বিভাগ গঠিত হয়। অবশেষে ২০০০ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

১. বরগুনা জেলাঃ-
বরগুনা নামের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও জানা যায় যে, উত্তরাঞ্চলের কাঠ ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলে কাঠ নিতে এস খরস্রোতা
খাকদোন নদী অতিক্রম করতে গিয়ে অনুকুল প্রবাহ বা বড় গোনের জন্য এখানে অপেক্ষা করত বলে এ স্থানের নাম হয় বড় গোনা।কারো মতে আবার স্রোতের বিপরীতে গুন (দড়ি) টেনে নৌকা অতিক্রম করতে হতো বলে এ স্থানের নাম বরগুনা। কেউ কেউ বলেন, বরগুনা নামক কোন প্রভাবশালী রাখাইন অধিবাসীর নামানুসারে বরগুনা। আবার কারো মতে বরগুনা নামক কোন এক বাওয়ালীর নামানুসারে এ স্থানের নাম করণ করা হয় বরগুনা।

২. বরিশাল জেলাঃ-
বরিশাল নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, পূর্বে এখানে খুব বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো, আর এই বড় শাল গাছের কারণে (বড়+শাল) বরিশাল নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ দাবি করেন, পর্তুগীজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। অন্য এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকা নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ও চৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে ‘বরিসল্ট’ বলতো। অথাৎ বরি (বড়)+ সল্ট(লবণ)= বরিসল্ট। আবার অনেকের ধারণা এখানকার লবণের দানাগুলো বড় বড় ছিল বলে ‘বরিসল্ট’ বলা হতো । পরবর্তিতে বরিসল্ট শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামে পরিচিতি লাভ করে।

৩. ভোলা জেলাঃ-
ভোলা জেলার নামকরণের পিছনে স্থায়ীভাবে একটি লোককাহিনী প্রচলিত আছে যে, ভোলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতুয়া নামক খালটি এখনকার মত অপ্রশস্ত ছিলনা। একসময় এটি পরিচিত ছিল বেতুয়া নদী নামে। খেয়া নৌকার সাহায্যে নদীতে পারাপার করা হত। বুড়ো এক মাঝি এখানে খেয়া নৌকার সাহায্যে লোকজন পারাপার করতো। তাঁর নাম ছিল ভোলা গাজী পাটনী। বর্তমানে যোগীরঘোলের কাছেই তাঁর আস্তানা ছিল। এই ভোলা গাজীর নামানুসারেই এক সময় স্থানটির নাম দেয়া হয় ভোলা। সেই থেকে আজ অব্দী ভোলা নামে পরিচিত।

৪. ঝালকাঠি জেলাঃ-
জেলার নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ জেলার জেলে সম্প্রদায়ের ইতিহাস। মধ্যযুগ-পরবর্তী সময়ে সন্ধ্যা, সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি আর বিষখালী নদীর তীরবর্তী এলাকায় জেলেরা বসতি স্থাপন করে। এর প্রাচীন নাম ছিল ‘মহারাজগঞ্জ’। মহারাজগঞ্জের ভূ-স্বামী শ্রী কৈলাশ চন্দ্র জমিদারি বৈঠক সম্পাদন করতেন এবং পরবর্তীতে তিনি এ স্থানটিতে এক গঞ্জ বা বাজার নির্মাণ করেন। এ গঞ্জে জেলেরা জালের কাঠি বিক্রি করত। এ জালের কাঠি থেকে পর্যায়ক্রমে ঝালকাঠি নামকরণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। জানা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে জেলেরা এখানে মাছ শিকারের জন্য আসত এবং যাযাবরের মতো সুগন্ধা নদীর তীরে বাস করত। এ অঞ্চলের জেলেদের পেশাগত পরিচিতিকে বলা হতো ‘ঝালো’। এরপর জেলেরা বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে এখানে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলে। এভাবেই জেলে থেকে ঝালো এবং জঙ্গল কেটে বসতি গড়ে তোলার কারণে কাটি শব্দের প্রচলন হয়ে ঝালকাটি শব্দের উৎপত্তি হয়। পরবর্তীকালে ঝালকাটি রূপান্তরিত হয় ঝালকাঠিতে।১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী ঝালকাঠি পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা লাভ করে।

৫. পটুয়াখালী জেলাঃ-
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি থেকে জানা যায যে, পটুয়াখালী চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অন্তর্ভক্ত ছিল। পটুয়াখালী নামকরণের পিছনে প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের লুন।টন অত্যাচারের ইতিহাস জড়িত আছে বলে জানা যায়। পটুয়াখালী শহরের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত নদীটি পূর্বে ভরনী খাল নামে পরিচিত ছিল। ষোড়শ শতাব্দীর শুরু থেকে পর্তুগীজ জলদস্যুরা এই খালের পথ দিয়ে এস সন্নিহিত এলাকায় নির্বিচারে অত্যাচার হত্যা লুন্ঠন চালাত। স্থানীয় লোকেরা এই হানাদারদের ‘নটুয়া’ বলত এবং তখন থেকে খালটি নটুয়ার খাল নামে ডাকা হয়। কথিত আছে, এই “নটুয়ার খাল” খাল থেকে পরবর্তীতে এ এলাকার নামকরণ হয় পটুয়াখালী।

৬. পিরোজপুর জেলাঃ-
“ফিরোজ শাহের আমল থেকে ভাটির দেশের ফিরোজপুর,
বেনিয়া চক্রের ছোয়াচ লেগে পাল্টে হলো পিরোজপুর”

উপরোক্ত কথন থেকে পিরোজপুর নামকরণের একটা সূত্র পাওয়া যায়। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলাল উদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেয় বংশধর হিসেবে দাবি করেছিলেন বলে জানা যায়। বাংলার সুবেদার শাহ।। সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসে আত্মগোপন করেন। এক পর্যায়ে নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পাড়ে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয়, শাহ সুজা তাঁর দুই কন্যাসহ আরাকান রাজ্যে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী ও এক শিশুপ্রত্র রেখে যান। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে পশ্চিমে চলে আসে এবং বর্তমান পিরোজপুরের পাশ্ববর্তী দামোদর নদীর মুখে আস্তানা তৈরি করেন। এ শিশুর নাম ছিল ফিরোজ এবং তাঁর নামানুসারে হয় ফিরোজপুর। কালের বিবর্তনে ফিরোজপুরের নাম হয় ‘পিরোজপুর’। পিরোজপুর ১৯৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা এবং পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে জেলার রূপান্তরিত হয়।

২। চট্টগ্রাম বিভাগঃ-

১. বান্দরবন জেলাঃ-
বান্দরবন জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি আছে, এলাকার বাসিন্দাদের মুখে প্রচলিত রূপকথায় অত্র এলাকায় এ সময় অসংখ্য বানর বাস করত। আর এ ই বানরগুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অতি বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেলে বানরের দল ছড়া পাড় থেকে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পার হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই র্দশ্য ধেকতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে জায়গাটি “ম্যাঅকছি ছড়া” হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মার্মা ভাষায় ম্যাঅক শব্দটির অর্থ হল বানর আর ছিঃ শব্দটির অর্থ হল বাধঁ। কালের প্রবাহে বাংল ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম বান্দরবন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তবে মার্মা ভাষায় বান্দরবনের প্রকৃত নাম “রদ ক্যওচি চিম্রো’।

২. ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলাঃ-
১৯৮৪ সালে ব্রাক্ষ্মবাড়িয়া জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তার আগে এটি কুমিল্লা জেলার একটি মহকুমা ছিল। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাইনি, আপনাদের জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।

৩. চাঁদপুর জেলাঃ-
১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজ জরিপকারী মেজর জেমস রেনেল তৎকালনি বাংলার যে মানচিত্র অংকন করেছিলেন তাতে চাঁদপুর নামে এক অখ্যাত জনপদ ছিল। তখন চাঁদপুরের দক্ষিণে নরসিংহপুর নামক ( বর্তমানে যা নদীগর্ভে বিলীন) স্থানে চাঁদপুরের অফিস-আদালত ছিল। পদ্মা ও মেঘনার সঙ্গমস্থল ছিল বতৃমান স্থান থেকে পাওয়া প্রায় ৬০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে। মেঘনা নদীর ভাঙ্গাগড়ার খেলায় এ এলাকা বর্তমানে বিলীন। বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের দখলে ছিল। ঐতিহাসিক জে.এম সেনগুপ্তের মতে চাঁদরায়ের নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কথিত আছে চাঁপুরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কারো কারো মতে, শাহ আহমেদ চাঁদ নামে একজন প্রশাষক দিল্লী থেকে পঞ্চদশ শতকে এখানে এসে একটি নদী বন্দর স্থাপন করেছিলেন। তাঁর নামানুসারে চাঁদপুর। ১৮৭৮ সালে প্রথম চাঁদপুর মহকুমার সৃষ্টি হয়। ১৮৯৬ সালের ১ অক্টোবর চাঁদপুর শহরকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারী চাঁদপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৪. চট্টগ্রাম জেলাঃ-
চট্টগ্রামের প্রায় ৪৮ টি নামের খোঁজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে রম্যভূমি, চাটিগাঁ, চাতগাও, রোসাং, চিতাগঞ্জ, জাটিগ্রাম ইত্যাদি। চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে, পন্ডিত বার্নোলির মতে, আরবি ‘শ্যাত (খন্ড) অর্থ বদ্বীপ, গাঙ্গ অর্থ গঙ্গা নদী থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। অপর এক মতে ত্রয়োদশ শতকে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন বার জন আউলিয়া। তাঁরা একটি বড় বাতি বা চেরাগ জ্বালিয়ে উঁচু জায়গায় স্থাপন করেছিলেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘চাটি’ অর্থ বাতি বা চেরাগ ্এবং গাঁও অর্থ গ্রাম। এ থেকে নাম হয় ”চাটিগাঁও”। এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার উইলিয়াম জোন্সের মতে, এ এলাকার একটি ক্ষুদ্র পাখির নাম থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম মোঘল সম্রাজের অংশ হয়। আরাকানদের পরাজিত করে মোঘল এর নাম রাখেন ইসলামাবাদ। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে মীর কাশিম আলী খান ইসলামাবাদকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করেন। পরে কোম্পানি এর নাম রাখেন চিটাগাং।

৫. কুমিল্লা জেলাঃ-
প্রাচীনকালে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল এবং পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়। কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত লোককথা আছে, যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াং কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত। তাঁর বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া
( Kiamolonkia) নামক স্থানের বর্ণনা রয়েছে তা থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৬. কক্সবাজার জেলাঃ-
আরব ব্যবসয়ী ও ধর্ম প্রচারকগণ ৮ম শতকে চট্টগ্রাম ও আকিব বন্দরে আগমন করেন। এই দুই বন্দরের মধ্যবর্তী হওয়ায় কক্সবাজার এলাকা আরবদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে। নবম শতাব্দীতে কক্সবাজার সহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম হরিকেলার রাজা কান্তিদেব দ্বারা শাসিত হয়। ৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আরাকান রাজা সুলাত ইঙ্গ চট্টগ্রাম দখল করে নেবার পর থেকে কক্সবাজার আরাকান রাজ্যের অংশ হয়। ১৭৮৪ সালে রার্মারাজ বোধাপায়া আরাকান দখল করে নেয়। ১৭৯৯ সালে বার্মারাজের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রায় ১৩ হাজার আরাকনি কক্সবাজার থেকে পালিয়ে যায়। এদর পূনর্বাসন করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একজন হিরাম কক্সকে নিয়োগ করে। পূনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হবার পূর্বেই হিরাম কক্স মৃত্যু বরণ করেন। পূনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তাঁর অবদানের জন্য কক্স-বাজার নামক একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কক্স-বাজার থেকে কক্সবাজার নামের উৎপত্তি।

৭. ফেনী জেলাঃ-
ফেনী নদীর নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় ফেনী। মধ্যযুগে কবি ও সাহিত্যিকদের কবিতা ও সাহিত্যে একটি বিশেষ নদীর স্রোদধা ও ফেনী পরাপারের ঘাট হিসেবে আমরা ফনী শব্দটি পাই। ষোড়শ শতাব্দীতে কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর পরাগলপুরের বর্ণনায় লিখেছেন, ‘ফনী নদীতে বেষ্টিত চারিধার, পূর্বে মহাগিরি পার পাই তার’। সতের শতকে মির্জা নাথানের ফার্সী ভাষায় রচিত ‘বাহরিস্থান-ই-গায়েরীতে’ ফনী শব্দ ফেনীতে পরিণত হয়। আটারো শতকের ষেষ ভাগে কবি আলী রেজা প্রকাশ কানু ফকির তাঁর পীরের বসতি হাজীগাঁওয়ের অবস্থান সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘ফেনীর দক্ষিণে এক বর উপাম, হাজীগাঁও করিছিল সেই দেশের নাম’। মোহাম্মদ মুকিম তাঁর পৈতৃক বসতির বর্ণনাকালে বলেছেন,”ফেনীর পশ্চিমভঅগে জুগিদিয়া দেশ…………….। বলাবাহুল্য তাঁরাও নদী অর্থে ফেনী শব্দ ব্যবহার করেছেন। মুসলমান কবি-সাহিত্যিকদের ভাষায় আদি শব্দ ‘ফনী’ ফেনীতে পরিণত হয়েছে।

৮. খাগড়াছড়ি জেলাঃ-
খাগড়াছড়ি একটি নদীর নাম। নদীর পাড়ে খাগড়া বন থাকায় খাগড়াছড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে।

৯. লক্ষীপুর জেলাঃ-
লক্ষীপুর জেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাইনি, আপনাদের জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।

১০. নোয়াখালী জেলাঃ-
নোয়াখালী জেলা প্রচীন নাম ছিল ভুলুয়া। নোয়াখালী সদর থানার আদি নাম ছিল সুধারাম। ইতিহাসবিদদের মতে, একবার ত্রিপুরার পাহাড় থেকে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর পানিতে ভুলুয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহভঅবে প্লাবিত হয়ে ফসলি জমির ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি করে।এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে ১৬৬০ সালে একটি বিশাল খাল খনন করা হয়, যা পানি প্রবাহকে ডাকাতিয়া নদী হতে রামগঞ্ঝ, সোইমুড়ী ও চৌমুহনী হয়ে মেঘনা এবং ফেনী নদীর দিকে প্রবাহিত করে। এই বিশাল খালকে নোয়াখালীর ভাষায় ‘নোয়া (নুতুন) খাল’ বলা হত এর ফলে ‘ভুলুয়া’ নামটি পরিবর্তিত হয়ে ১৬৬৮ সালে নোয়াখালী নামে পরিচিতি লাভ করে।

১১. রাঙ্গামাটি জেলাঃ-
রাঙামাটি জেলা নামকরণ সম্পর্কে বিলু কবীরের লেখা ‘বাংলাদেশ জেলা : নামকরণের ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায় তা হলো- এই এলাকায় পর্বতরাজি গঠিত হয়েছিল টারশিয়রি যুগে। এই যুগের মাটির প্রধান ব্যতিক্রম এবং বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর রঙ লালচে বা রাঙা। এই এলাকার গিরিমৃত্তিকা লাল এবং মাটিও রাঙা বলেই এই জনপদের নাম হয়েছে রাঙামাটি। প্রকৃতি সূচক এই নামকরণটির বিষয়ে অন্য প্রচলিত কথাপরম্পরা হলো- বর্তমান রাঙামাটি জেলা সদরের পূর্বদিকে একটি ছড়া ছিল, যা এখন হ্রদের মধ্যে নিমজ্জিত। এই হ্রদের স্বচ্ছ পানি যখন লাল বা রাঙামাটির উপর দিয়ে ঢাল বেয়ে প্রপাত ঘটাতো, তখন তাকে লাল দেখাতো। তাই এই ছড়ার নাম হয়েছিল ‘রাঙামাটি’। এই জেলা সদরের পশ্চিমে আরও একটি ছাড়া ছিল। অনুরূপ কারণে তার নাম দেয়া হয়েছিল ‘রাঙাপানি’। এই দুই রাঙা ছড়ার মোহনার বাঁকেই গড়ে উঠেছে বর্তমান জেলা শহর। যা মূলত ছিল অনাবাদী টিলার সমষ্টি এবং বহু উপত্যকার এক নয়নাভিরাম বিস্ময়ভূমি। এই দুটি ছড়া রাঙামাটি ও রাঙাপানি হতে ‘রাঙামাটি’ জেলার নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৯৮৩ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা গঠন করা হয়।

৩। ঢাকা বিভাগঃ-

১. ঢাকা জেলাঃ-
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা মোঘল-পূর্ব যুগে কিছু গুরুত্বধারন করলেও শহরটি ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভ করে মোঘল যুগে। ঢাকা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে স্পষ্ট করে তেমন কিছু জানা যায় না। এ সম্পর্কে প্রচলিত মতগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপঃ ক) একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাক গাছ (বুটি ফুডোসা) ছিল; খ) রাজধানী উদ্বোধনের দিনে ইসলাম খানের নির্দেশে এখানে ঢাক অর্থাৎ ড্রাম বাজানো হয়েছিল; গ) ‘ঢাকাভাষা’ নামে একটি প্রাকৃত ভাষা এখানে প্রচলিত ছিল; ঘ) রাজতরঙ্গিণী-তে ঢাক্কা শব্দটি ‘পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে অথবা এলাহাবাদ শিলালিপিতে উল্লেখিত সমুদ্রগুপ্তের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ডবাকই হলো ঢাকা।
কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাই রাজা মন্দিরের নাম ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে।আবার অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন, তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ শহরে ‘ঢাক’ বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্দির রূপ ধারণ করে এবং তা থেকেই এই শহরের নাম ঢাকা হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম খান চিশতি সুবাহ বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন এবং সম্রাটের নামানুসারে এর নামকরণ করে জাহাঙ্গীরনগর।

২. ফরিদপুর জেলাঃ-
ফরিদপুরের নামকরণ করা হয়েছে এখানকার প্রখ্যাত সুফী সাধক শাহ শেখ ফরিদুদ্দিনের নামানুসারে।

৩. গাজীপুর জেলাঃ-
বিলু কবীরের লেখা ‘বাংলাদেশের জেলা : নামকরণের ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, মহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালে জনৈক মুসলিম কুস্তিগির গাজী এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং তিনি বহুদিন সাফল্যের সঙ্গে এ অঞ্চল শাসন করেছিলেন। এ কুস্তিগির/পাহলোয়ান গাজীর নামানুসারেই এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় গাজীপুর বলে লোকশ্রুতি রয়েছে। আরেকটি জনশ্রুতি এ রকম সম্রাট আকবরের সময় চবি্বশ পরগনার জায়গিরদার ছিলেন ঈশা খাঁ। এই ঈশা খাঁরই একজন অনুসারীর ছেলের নাম ছিল ফজল গাজী। যিনি ছিলেন ভাওয়াল রাজ্যের প্রথম ‘প্রধান’। তারই নাম বা নামের সঙ্গে যুক্ত ‘গাজী’ পদবি থেকে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় গাজীপুর। গাজীপুর নামের আগে এ অঞ্চলের নাম ছিল জয়দেবপুর। এ জয়দেবপুর নামটি কেন হলো, কতদিন থাকল, কখন, কেন সেটা আর থাকল না সেটিও প্রাসঙ্গিক ও জ্ঞাতব্য। ভাওয়ালের জমিদার ছিলেন জয়দেব নারায়ণ রায় চৌধুরী। বসবাস করার জন্য এ জয়দেব নারায়ণ রায় চৌধুরী পীরাবাড়ি গ্রামে একটি গৃহ নির্মাণ করেছিলেন। গ্রামটি ছিল চিলাই নদীর দক্ষিণ পাড়ে। এ সময় ওই জমিদার নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে এ অঞ্চলটির নাম রাখেন ‘জয়দেবপুর’ এবং এ নামই বহাল ছিল মহকুমা হওয়ার আগ পর্যন্ত। যখন জয়দেবপুরকে মহকুমায় উন্নত করা হয়, তখনই এর নাম পাল্টে জয়দেবপুর রাখা হয়। উল্লেখ্য, এখনো অতীতকাতর-ঐতিহ্যমুখী স্থানীয়দের অনেকেই জেলাকে ‘জয়দেবপুর’ বলেই উল্লেখ করে থাকেন। গাজীপুর সদরের রেলওয়ে স্টেশনের নাম এখনো ‘জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন’। তবে বিস্তারিত আলোচনায় গেলে বলতেই হয়, গাজীপুরের আগের নাম জয়দেবপুর এবং তারও আগের নাম ভাওয়াল। গাজীপুরকে ১৯৮৪খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ জেলা এবং ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারী রোজ: সোমবার সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করা হয়।

৪. গোপালগঞ্জ জেলাঃ-
গোপালগঞ্জ জেলা শহরের রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস। অতীতের রাজগঞ্জ বাজার আজকের জেলা শহর গোপালগঞ্জ। আজ থেকে প্রায় শতাব্দীকাল পূর্বে শহর বলতে যা বুঝায় তার কিছুই এখানে ছিলোনা। এর পরিচিতি ছিলো শুধু একটি ছোট্ট বাজার হিসেবে। এঅঞ্চলটি মাকিমপুর ষ্টেটের জমিদার রানী রাসমণির এলাকাধীন ছিলো। উল্লেখ্য রানী রাসমণি একজন জেলের মেয়ে ছিলেন। সিপাই মিউটিনির সময় তিনি একজন উচ্চ পদস্থ ইংরেজ সাহেবের প্রাণ রক্ষা করেন। পরবর্তীতে তারই পুরস্কার হিসাবে বৃটিশ সরকার রাসমণিরকে মাকিমপুর ষ্টেটের জমিদারী প্রদার করেন এবং তাঁকে রানী উপাধিতে ভূষিত করেন। রানী রাসমণির এক নাতির নাম ছিলো নব-গোপাল তিনি তাঁর স্নেহাস্পদ নাতির নাম এবং পুরানো ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নাতিন নামের ‘গোপাল’ অংশটি প্রথমে রেখে তার সাথে রাজগঞ্জের ‘গঞ্জ’ যোগ করে এ জাযগাটির নতুর নামকরণ করেন গোপালগঞ্জ। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর জেলার মহকুমা থেকে গোপালগঞ্জ জেলা সৃষ্টি হয়।

৫. জামালপুর জেলাঃ-
সাধক দরবেশ হযরত শাহ জামাল (র) এর পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমন্ডিত গরো পাহাড়ের পাদদেশে যমুনা-ব্রক্ষ্মপুত্র বিধৌত বাংলাদেশের ২০-তম জেলা জামালপুর। হযরত শাহ জামাল (র) এর নামানুসারে জামালপুরের নামকরণ হয়।

৬. কিশোরগঞ্জ জেলাঃ-১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে কিশোরগঞ্জ মহকুমার জন্ম হয়। মহকুমার প্রথম প্রশাসক ছিলেন মিঃ বকসেল। বর্তমান কিশোরগঞ্জ তৎকালীন জোয়ার হোসেনপুর পরগনার অন্তর্ভক্ত ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকেও কিশোরগঞ্জ এলাকা ‘কাটখালী’ নামে পরিচিত ছিল। ইতিহাসবিদদের ধারণা ও জনশ্রুতি মতে এ জেলার জমিদার ব্রজকিশোর মতান্তরে নন্দকিশোর প্রামানিকের ‘কিশোর’ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হাট বা গঞ্জের ‘গঞ্জ’ যোগ করে কিশোরগঞ্জ নামকরণ করা হয়।

৭. মাদারীপুর জেলাঃ-
মাদারীপুর জেলা একটি ঐতিহাসিক সমৃদ্ধ জনপদ ছিল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে সাধক হযরত বদরুদ্দিন শাহ মাদার (র) এর নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়। প্রাচীনকালে মাদারীপুরের নাম ছিল ইদিলপুর। ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

৮. মানিকগঞ্জ জেলাঃ-
মূরত সংস্কৃত ‘মানিক্য’ শব্দ থেকে মানিক শব্দটি এসেছে। মানিক হচ্ছে চুনি পদ্মরাগ। গঞ্জ শব্দটি ফরাসী। মানিকগঞ্জের নামের ঋৎপত্তি ইতিহাস আজও রহস্যবৃত। অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে সুফি দরবেশ মানিক শাহ সিংগাইর উপজেলার মানিকনগরে আসেন এবং খানকা প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন।কারও মতে দূর্ধর্ষ পাঠান সর্দার মানিক ঢালীর নামানুসারে মানিকগঞ্জ নামের উৎপত্তি। আবার কারো মতে, নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিশাবাস ঘাতক মানিক চাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তার নমানুসারে ১৮৪৫ সালের মে মাসে মানিকগঞ্জ মহকুমার নামকরণ হয়। মানিকগঞ্জ মহকুমার নামকরণ সম্পর্কীত উল্লেখ্য তিনটি পৃথক স্থানীয় জনশ্রুতি এবং অনুমান নির্ভর। এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি, তবে মানিক শাহের নামানুসারে মানিকগঞ্জ মহকুমার নামকরণ সম্পর্কীত জনশ্রুতি এবং ঘটনা প্রবাহ থেকে যে চিত্র পাওয়া যায় তাই সঠিক বলে ধরা হয়।

৯. মুন্সীগঞ্জ জেলাঃ-
মুন্সিগঞ্জে প্রাচীন নাম ছিল ইদ্রাকপুর। মোঘল শাসনামলে এই ইদ্রাকপুর গ্রামে মুন্সী হায়দার হোসেন নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মোঘল শাসক দ্বারা ফৌজদার নিযুক্ত ছিলেন। অত্যন্ত সজ্জন ও জনহিতৈষী মুন্সী হায়দার হোসেনের নামে ইদ্রাকপুরের নাম হয় মুন্সীগঞ্জ। কারো কারো মতে জমিদার এনায়েত আলী মুন্সীর নামানুসারে মুন্সীগঞ্জে নামকরণ করা হয়।

১০. ময়মনসিংহ জেলাঃ-
ময়মনসিংহ জেলার নাম নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ’র জন্য এ অঞ্চলে একটি নুতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই থেকে নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। সলিম যুগের উৎস হিসেবে নাসিরাবাদ, নাম আজও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও নাসিরাবাদ কথাটি উল্লেখ্য করা হচ্ছে না। ১৭৭৯ সালে প্রকাশিত রেনেল এর ম্যাপে মোমেসিং নামটি ‘ময়মনসিংহ’ অঞ্চলকেই নির্দেশ করে। তার আগে আইন-ই-আকবরীতে ‘মিহমানশাহী’ এবং ‘মনমনিসিংহ’ সকার বাজুহার পরগনা হিসেবে লিখিত আছে। যা বর্তমান ময়মনসিংহকেই ধরা হয়।

১১. নারায়ণগঞ্জ জেলাঃ-
১৭৬৬ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা বিকন লাল পান্ডে( বেণু ঠাকুর বা লক্ষীনায়ায়ণ ঠাকুর) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিকট থেকে এ অঞ্চলের মালিকানা গ্রহণ করে। তিনি প্রভু নারায়ণের সেবার ব্যয়ভার বহনের জন্য একটি উইলের মাধ্যমে শীতলক্ষা নদীর তীরে অবস্থিত মার্কেটকে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করেন। তাই পরবর্তীকালে এ স্থানের নাম হয় নারায়ণগঞ্জ।

১২. নেত্রকোণা জেলাঃ-
নেত্রকোণার নামকরণ হয়েছে নাটেরকোণা নামক গ্রামের নাম থেকে।

১৩. নরসিংদী জেলাঃ-
কথিত আছে, প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি নরসিংহ নামক একজন রাজার শাসনাধীন ছিল। আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে রাজা নরসিংহ প্রাচীন ব্যক্ষ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে নরসিংহপুর নামে একটি ছোট নগর স্থাপন করেছিলেনঅ তাঁরই নামানুসারে নরসিংদী নামটি আবির্ভূত হয়। নরসিংহ নামের সাথে ‘দী’ যুক্ত হয়ে নরসিংদী হয়েছে। নরসিংহদী শব্দের পরিবর্তিত রূপই “নরসিংদী”।

১৪. রাজবাড়ী জেলাঃ-
রাজা সূর্য্য কুমারের নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ করা হয়। রাজা সূর্য্য কুমারের পিতামহ প্রভুরাম নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার রাজকর্মী থাকাকালীন কোন কারণে ইংরেজদের বিরাগভাজন হলে পলাশীর যুদ্ধের পর লক্ষীকোলে এস আত্মগোপন করেন। পরে তাঁর পুত্র দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ এ অঞ্চলে জমিদারী গড়ে তোলেন। তাঁরই পুত্র রাজা সূর্য্য কুমার ১৮৮৫ সালে জনহিতকর কাজের জন্য রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন। ১৯৮৪ সালে ১মার্চ জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

১৫. শরীয়তপুর জেলাঃ-
বৃটিশ বিরোধী তথা ফরায়েজী আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর নামানুসারে শরীয়তপুরের নামকরণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে ১লা মার্চ শরীয়তপুর জেলা শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন তথ্য মন্ত্রী জনাব নাজিম উদ্দিন হাসিম।

১৬. শেরপুর জেলাঃ-
বাংলার নবাবী আমলে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজী দশ কাহনিয়া অঞ্চল দখল করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। এই শের আলী গাজীর নামে দশ কাহনিয়ার নাম হয় শেরপুর।

১৭. টাঙ্গাইল জেলাঃ-
টাঙ্গাইলের নামকরণ বিষয়ে রয়েছে বহুজনশ্রুতি ও নানা মতামত। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রেনেল তাঁর মানচিত্রে এ সম্পূর্ণ অঞ্চলকেই আটিয়া বলে দেখিয়েছেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের আগে টাঙ্গাইল নামে কোনো স্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। টাঙ্গাইল নামটি পরিচিতি লাভ করে ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মহকুমা সদর দপ্তর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে স্থানান্তরের সময় থেকে।
টাঙ্গাইলের ইতিহাস প্রণেতা খন্দকার আব্দুর রহিম সাহেবের মতে, ইংরেজ আমলে এদেশের লোকেরা উচু শব্দের পরিবর্তে ‘টান’ শব্দই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল বেশি। এখনো টাঙ্গাইল অঞ্চলে ‘টান’ শব্দের প্রচলন আছে। এই টানের সাথে আইল শব্দটি যুক্ত হয়ে হয়েছিল টান আইল। আর সেই টান আইলটি রূপান্তরিত হয়েছে টাঙ্গাইলে। টাঙ্গাইলের নামকরণ নিয়ে আরো বিভিন্নজনে বিভিন্ন সময়ে নানা মত প্রকাশ করেছেন। কারো কারো মতে, বৃটিশ শাসনামলে মোগল প্রশাসন কেন্দ্র আটিয়াকে আশ্রয় করে যখন এই অঞ্চল জম-জমাট হয়ে উঠে। সে সময়ে ঘোড়ার গাড়িছিল যাতায়াতের একমাত্র বাহন, যাকে বর্তমান টাঙ্গাইলের স্থানীয় লোকেরা বলত ‘টাঙ্গা’। বর্তমান শতকের মাঝামাঝি পর্যন্তও এ অঞ্চলের টাঙ্গা গাড়ির চলাচল স্থল পথে সর্বত্র। আল শব্দটির কথা এ প্রসঙ্গে চলে আসে। বর্তমান টাঙ্গাইল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের নামের সাথে এই আল শব্দটির যোগ লক্ষ্য করা যায়। আল শব্দটির অর্থ সম্ভবত সীমা নির্দেশক যার স্থানীয় উচ্চারণ আইল। একটি স্থানকে যে সীমানা দিয়ে বাঁধা হয় তাকেই আইল বলা হয়। টাঙ্গাওয়ালাদের বাসস্থানের সীমানাকে ‘টাঙ্গা+আইল’ এভাবে যোগ করে হয়েছে ‘টাঙ্গাইল’ এমতটি অনেকে পোষণ করেন। আইল শব্দটি কৃষিজমির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই শব্দটি আঞ্চলিক ভাবে বহুল ব্যবহৃত শব্দ। টাঙ্গাইলের ভূ-প্রকৃতি অনুসারে স্বাভাবিক ভাবে এর ভূমি উঁচু এবং ঢালু। স্থানীয়ভাবে যার সমার্থক শব্দ হলো টান। তাই এই ভূমিরূপের কারণেই এ অঞ্চলকে হয়তো পূর্বে ‘টান আইল’ বলা হতো। যা পরিবর্তীত হয়ে টাঙ্গাইল হয়েছে।

৪। খুলনা বিভাগঃ-

১. বাগেরহাট জেলাঃ-
‍‍সুন্দরবনে বাঘের বাস
দাড়টানা ভৈরব পাশ
সবুজ শ্যামলে ভরা
নদী বাঁকে বসতো যে হাট
তার নাম বাগের হাট।
এক সময় বাগেরহাটের নাম ছিল খলিফাতাবাদ বা প্রতিনিধির শহর। খানজাহান আলী (রঃ) গৌড়ের সুলতানদের প্রতিনিধি হিসেবে এ অঞ্চল শাসন করতেন। কেউ কেউ মনে করেন, বরিশালের শাসক আঘা বাকের এর নামানুসারে বাগেরহাট হয়েছে। কেউবা বলেন, পাঠান জায়গীদার বাকির খাঁ এর নামানুসারে বাগেরহাট হয়েছে। আবার কারো মতে, বাঘ শব্দ হতে বাগেরহাট নাম হয়েছে। জনশ্রুতি আছে খানজাহান আলী (রঃ) এর একটি বাগ(বাগান, ফার্সী শব্দ) বা বাগিচা ছিল। এ বাগ শব্দ হতে বাগেরহাট। কাো মতে, নদীর বাঁকে হাট বসতো বিধায় বাঁকেরহাট। বাঁকেরহাট হহতে বাগেরহাট।

২. চুয়াডাঙ্গা জেলাঃ-
চুয়াডাঙ্গার নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে যে, এখানকার মল্লিক বংশের আদিপুরুষ চুঙ্গো মল্লিকের নামে এ জায়গার নাম চুয়াডাঙ্গা হয়েছে। ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চুঙ্গো মল্লিক তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভারতের নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার সীমানার ইটেবাড়ি- মহারাজপুর গ্রাম থেকে মাথাভাঙ্গা নদীপথে এখানে এস প্রথম বসতি গড়েন। ১৭৯৭ সালের এক রেকর্ডে এ জায়গার নাম চুঙ্গোডাঙ্গা উল্লেখ রয়েছে। ফারসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করার সময় উচ্চারণের বিকৃতির কারণে বর্তমান চুয়াডাঙ্গা নামটা এসেছে। চুয়াডাঙ্গা নামকরণের আরো দুটি সম্ভাব্য কারণ প্রচলিত আছে। চুয়া < চয়া চুয়াডাঙ্গা হয়েছে।

৩. যশোর জেলাঃ-
১৭৮১ সালে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এটিই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম জেলা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন হওয়া জেলাটি যশোর। যশোর, সমতটের একটা প্রাচীন জনপদ। নামটি অতি পুরানো। যশোর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। যশোর (জেসিনরে) আরবি শব্দ যার অর্থ সাকো। অনুমান করা হয় কসবা নামটি পীর খানজাহান আলীর দেওয়া (১৩৯৮ খৃঃ)। এককালে যশোরের সর্বত্র নদী নালায় পরিপূর্ণ ছিল। পূর্বে নদী বা খালের উপর সাকো নির্মিত হতো। খানজাহান আলী বাঁশের সাকো নির্মাণ করে ভৈরব নদী পার হয়ে মুড়লীতে আগমন করেন বলে জানা যায়। এই বাঁশের সাকো থেকে যশোর নামের উৎপত্তি। তবে এই মতে সমর্থকদের সংখ্যা খুবই কম। ইরান ও আরব সীমান্তে একটি স্থানের নাম যশোর যার সাথে এই যশোরের কোন সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না। খানজাহান আলীর পূর্ব থেকেই এই যশোর নাম ছিল। অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, প্রতাপদিত্যের পতনের পর চাঁচড়ার রাজাদের যশোরের রাজা বলা হত। কেননা তারা যশোর রাজ প্রতাপাদিত্যের সম্পত্তির একাংশ পুরস্কার স্বরূপ অর্জন করেছিলেন। এই মতও সঠিক বলে মনে হয়। জে, ওয়েস্টল্যাণ্ড তাঁর যশোর প্রতিবেদনের ১৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, রাজা প্রতাপাদিত্য রায়ের আগে জেলা সদর কসবা মৌজার অর্ন্তভুক্ত ছিল। বনগাঁ-যশোর পিচের রাস্তা ১৮৬৬-১৮৬৮ কালপর্বে তৈরী হয়। যশোর-খুলনা ইতিহাসের ৭৬ পাতায় লেখা আছে “প্রতাপাদিত্যের আগে লিখিত কোন পুস্তকে যশোর লেখা নাই”। সময়ের বিবর্তনে নামের পরিবর্তন স্বাভাবিক।

৪. ঝিনাইদহ জেলাঃ-
প্রাচীনকালে বর্তমান ঝিনাইদহের উত্তর-পশ্চিম দিকে নবগঙ্গা নদীর ধারে ঝিনুক কুড়ানো শ্রমিকের বসতি গড়ে ওঠে বলে জানা যায। কলকাতা থেকে ব্যবসায়ীরা ঝিনুকের মুক্তা সঙগ্রহরের জন্য এখানে ঝিনুক কিনতে আসতো। সে সময় ঝিনুক প্রাপ্তির স্থানটিকে ঝিনুকদহ বলা হত। অনেকের মতে ঝিনুককে আঞ্চলিক ভাষায় ঝিনেই বা ঝিনাই বলে। দহ অর্থ বড় জলাশয়, দহ ফার্সী শব্দ যার অর্ত গ্রাম। সেই অর্থে ঝিনুক দহ বলতে ঝিনুকের জলাশয় অথবা ঝিনুকের গ্রাম। ঝিনুক এবং দহ থেকেই ঝিনুকদহ বা ঝিনেইদহ যা রূপান্তরিত হয়ে আজকের এই ঝিনাইদহ।

৫. খুলনা জেলাঃ-
হযরত পীর খানজাহান আলীর (র.) স্মৃতি বিজড়িত ও ভৈরব-রূপসা বিধৌত পৌর শহর খুলনার ইতিহাস নানাভাবে ঐতিহ্য মন্ডিত। খুলনা নামকরণের উৎপত্তি সম্বন্ধে নানান মত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত মতগুলো হলো : মৌজা ‘কিসমত খুলনা’ খুলনা খুলনা; ধনপতি সাওদাগরের দ্বিতীয় স্ত্রী খুল্লনার নামে নির্মিত ‘খুল্লনেশ্বরী কালী মন্দির’ থেকে খুলনা; ১৭৬৬ সালে ‘ফলমাউথ’ জাহাজের নাবিকদের উদ্ধারকৃত রেকর্ডে লিখিত Culnea শব্দ থেকে খুলনা। ইংরেজ আমলের মানচিত্রে লিখিত Jessore-Culna শব্দ থেকে খুলনা,- কোনটি সত্য তা গবেষকরা নির্ধারণ করবেন।

৬. কুষ্টিয়া জেলাঃ-
কুষ্টিয়া জেলার নামকরণ নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে, কুষ্টিয়ায় এক সময় কোস্টার(পাট) চাষ হতো বলে কোস্ট শব্দ থেকে কুষ্টিয়ার উৎপত্তি। হেমিলটনের গেজেটিয়ারে উল্লেখ্য করেন যে, স্থানীয় জনগণ একে কুষ্টি বলে ডাকত। কুষ্টি থেকে কুষ্টিয়া নামকরণ হয়েছে। ১৯৮৪ সালে ৬ টি থানা নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা গঠিত হয়।

৭. মাগুরা জেলাঃ-
আজকের যেখানে মাগুরা জেলা শহর গড়ে ওঠেছে প্রাচীনকাল থেকেই এর গুরুত্ব অত্যধিক ছিল। কখন থেকে মাগুরা নাম হয়েছে তার সঠিক হিসেব মিলানো কষ্টকর। মাগুরা প্রাচীন আমলের একটি গ্রাম। মাগুরা দু’টি অংশে বিভক্ত ছিল। মহকুমা সদরের পূর্বে মাগুরা ও পশ্চিমে ছিল দরি মাগুরা। দরি শব্দের অর্থ মাদুর বা সতরঞ্জি। দরি মাগুরায় মাদুর তৈরি সম্প্রদায়ের লোক বাস করতো বলে নাম হয়েছিল দরি মাগুরা। ধর্মদাস নামে জনৈক মগ আরাকান খেকে এসে আগুরা শহরের পূর্ভ কোণের সোজাসুজি গড়াই নদীর তীরে খুলুমবাড়ি মৌজা প্রভুতি দখল করে। লোকে তাকে মগ জায়গীর বলে আখ্যায়িত করেছিল। অনেকের মতে মগরা থেকে মাগুরা নামের উৎপত্তি। লোক মুখে শোনা যায় এককালে মাগুরা এলাকায় বড় বিল ছিল সেই বিলে পাওয়া যেতো প্রচুর মাগুর মাছ। এই মাগুর মাছের নাম থেকেও মাগুরা নামের উৎপত্তি হতে পারে। মাগুরা নামের উৎপত্তি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধে্য মতভেদ রয়েছে। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ মাগুরা মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়।

৮. মেহেরপুর জেলাঃ-
মেহেরপুর নামকরণ সম্পর্কে এ পর্যন্ত দুটি অনুমান ভিত্তিক তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথমটি ইসলাম প্রচারক মরবেশ মেহের আলী নামীয় জনৈক ব্যক্তির নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেহেরপুর রাখা হয়। দ্বিতীয়টি বচনকার মিহির ও তাঁর পুত্রবধু খনা এই শহরে বাস করতেন বলে প্রচলিত আছে। মিহিরের নাম থেকে মিহিরপুর এবং পরবর্তীতে তা মেহেরপুর হয়। ১৯৮৪ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারী মেহেরপুর জেলার মর্যাদা লাভ করে।

৯. নড়াইল জেলাঃ-
নড়াইল নামকরণ নিয়ে ঐতিহাসিকবিদরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। কিংবদন্তী আছে, নড়িয়াল ফকিরের আশীর্বাদপুষ্ট নড়ি থেকে নড়িয়াল নামের উৎপত্তি। নড়িয়াল ফকিরের আশীর্বাদপুষ্ট তাই নাম হয় নড়িয়াল। পরবর্তীতে লোকমুখে বিকৃত হয়ে নড়িয়াল থেকে নড়াইল।

১০. সাতক্ষীরা জেলাঃ-
সাতক্ষীরা জেলার আদি নাম ছিল সাতঘরিয়া। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় বিষ্ণুরাম চক্রবর্তী নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কর্মচারী হিসেবে ১৭৭২ সালে নিলামে এই পরগনা কিনে গ্রাম স্থাপন করেন। তাঁর পুত্র প্রাণনাথ চক্রবর্তী সাতঘর কুলীন ব্রাক্ষ্মণ এনে এই পরগনায় প্রতিষ্ঠিত করেন তা থেকে সাতঘরিয়া নাম হয়।

৫। রাজশাহী বিভাগঃ-

১. বগুড়া জেলাঃ-
১২৮১-১২৯০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লরি সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবনের ২য় পুত্র সুলতান নাসিরউদ্দীন বগরা খান বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তাঁর নামানুসারে বগুড়া জেলার নামকরণ করা হয়েছে।

২. জয়পুরহাট জেলাঃ-
জেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাইনি, আপনাদের জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।

৩. নওগাঁ জেলাঃ-
নওগাঁ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ‘নও’(নুতুন) ও ‘গাঁ (গ্রাম) শব্দ থেকে শব্দ দুটি ফরাসী। নওগাঁ শব্দের অর্থ হলো নুতুন গ্রাম। ১৯৮৪ সালে ১ মার্চ নওগাঁ ১১ টি উপজেলা নিয়ে জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৪. নাটোর জেলাঃ-
নাটোর জেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নারদ নদী কথিত আছে এই নদীর নাম থেকেই ‘নাটোর’ শব্দটির উৎপত্তি। ভাষা গবেষকদের মতে নাতোর হচ্ছে মুল শব্দ। উচ্চারণগত কারণে নাটোর হয়েছে। নাটোর অঞ্চল নিম্নমুখী হওয়ায় চলাচল করা ছিল প্রায় অসম্ভব। জনপদটির দুর্গমতা বোঝাতে বলা হত নাতোর। নাতোর অর্থ দুর্গম। আরেকটি জনশ্রুতি আছে জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতার আমোদ-প্রমোদের জন্য গড়ে উঠেছিল বাইজিবাড়ি, নটিপাড়া জাতীয় সংস্কৃতি। এই নটি পাড়া থেকে নাটোর শব্দটির উৎপদ্দি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। ১৯৮৪ সালে নাটোর পূর্ণাঙ্গ জেলা লাভ করে।

৫. নবাবগঞ্জ জেলাঃ-
‘চাপাইনবাবগঞ্জ’ নামটি সাম্প্রতিকালের।এই এলাকা ‘নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। চাঁপাইগঞ্জ নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, প্রাক-ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চল ছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিহারভূমি এবং এর অবস্থান ছিল বর্তমান সদর উপজেলার দাউদপুর মৌজায়। নবাবরা তাঁদের পাত্র-মিত্র ও পরিষদ নিয়ে এখানে শিকার করতে আসতেন বলে এ স্থানের নাম হয় নবাবগঞ্জ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামের ইতিবৃত্ত নবাব আমলে মহেশপুর গ্রামে চম্পাবতী মতান্তরে ‘চম্পারানী বা চম্পাবাঈ’ নামে এক সুন্দরী বাঈজী বাস করতেন। তাঁর নৃত্যের খ্যাতি আশেপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি নবাবের প্রিয়পাত্রী হয়ে ওঠেন। তাঁর নামানুসারে এই জায়গার নাম ‘চাঁপাই”। এ অঞ্চলে রাজা লখিন্দরের বাসভূমি ছিল। লখিন্দরের রাজধানীর নাম ছিল চম্পক। চম্পক নাম থেকেই চাঁপাই। ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর (১৮৮৫-১৯৬৯ খ্রি) ‘বাঙলা সাহিত্যের কথা’ গ্রন্থের প্রথম খন্ডে বর্ণিত লাউসেনের শত্রুরা জামুতিনগর দিয়ে গৌড়ে প্রবেশ করে। বর্তমান ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া পূর্বে জামুতিনগর নামে পরিচিত ছিল। এসবের ওপর ভিত্তি করে কোনো কোনো গবেষক চাঁপাইকে বেহুলার শ্বশুরবাড়ি চম্পকনগর বলে স্থির করেছেন এবং মত দিয়েছেন যে, চম্পক নাম থেকেই চাঁপাই নামের উৎপত্তি।

৬. পাবনা জেলাঃ-
‘পাবনা’ নামকরণ নিয়ে কিংবদন্তির অন্ত নেই। এক কিংবদন্তি মতে গঙ্গার ‘পাবনী’ নামক পূর্বগামিনী ধারা হতে পাবনা নামের উৎপত্তি হয়েছে। অপর একটি সূত্রে জানা যায় ‘পাবন’ বা ‘পাবনা’ নামের একজন দস্যুর আড্ডাস্থলই এক সময় পাবনা নামে পরিচিতি লাভ করে। অপরদিকে কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, ‘পাবনা’ নাম এসেছে ‘পদুম্বা’ থেকে। কালক্রমে পদুম্বাই স্বরসঙ্গতি রক্ষা করতে গিয়ে বা শব্দগত অন্য ব্যুৎপত্তি হয়ে পাবনা হয়েছে। ‘পদুম্বা’ জনপদের প্রথম সাক্ষাৎ মিলে খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকে পাল নৃপতি রামপালের শাসনকালে।

৭. রাজশাহী জেলাঃ-
এই জেলার নামকরণ নিয়ে প্রচুর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়র মতে রাজশাহী রাণী ভবানীর দেয়া নাম। অবশ্য মিঃ গ্রান্ট লিখেছেন যে, রাণী ভবানীর জমিদারীকেই রাজশাহী বলা হতো এবং এই চাকলার বন্দোবস্তের কালে রাজশাহী নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। পদ্মার উত্তরাঞ্চল বিস্তীর্ন এলাকা নিয়ে পাবনা পেরিয়ে ঢাকা পর্যন্ত এমনকি নদীয়া, যশোর, বর্ধমান, বীরভূম নিয়ে এই এলাকা রাজশাহী চাকলা নামে অভিহিত হয়। অনুমান করা হয় ‘রামপুর’ এবং ‘বোয়ালিয়া’ নামক দু’টি গ্রামের সমন্বয়ে রাজশাহী শহর গ’ড়ে উঠেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে ‘রামপুর-বোয়ালিয়া’ নামে অভিহিত হলেও পরবর্তীতে রাজশাহী নামটিই সর্ব সাধারণের নিকট সমধিক পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে আমরা যে রাজশাহী শহরের সঙ্গে পরিচিত, তার আরম্ভ ১৮২৫ সাল থেকে। রামপুর-বোয়ালিয়া শহরের নামকরণ রাজশাহী কী করে হলো তা নিয়ে বহু মতামত রয়েছে। রাজাশাহী শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দুটি ভিন্ন ভাষার একই অর্থবোধক দুটি শব্দের সংযোজন পরিলতি হয়। সংস্কৃত ‘রাজ’ ও ফারসি ‘শাহ’ এর বিশেষণ ‘শাহী’ শব্দযোগে ‘রাজশাহী’ শব্দের উদ্ভব, যার অর্থ একই অর্থাৎ রাজা বা রাজা-রাজকীয় বা বা বাদশাহ বা বাদশাহী। তবে বাংলা ভাষায় আমরা একই অর্থের অনেক শব্দ দু-বার উচ্চারণ করে থাকি। যেমন– শাক-সবজি, চালাক-চতুর, ভুল-ভ্রান্তি, ভুল-ত্র“টি, চাষ-আবাদ, জমি-জিরাত, ধার-দেনা, শিক্ষা-দীক্ষা, দীন-দুঃখী, ঘষা-মাজা, মান-সম্মান, দান-খয়রাত, পাহাড়-পর্বত, পাকা-পোক্ত, বিপদ-আপদ ইত্যাদি। ঠিক তেমনি করে অদ্ভূত ধরনের এই রাজশাহী শব্দের উদ্ভবও যে এভাবে ঘটে থাকতে পারে তা মোটেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। এই নামকরণ নিয়ে অনেক কল্পকাহিনীও রয়েছে। সাধারণভাবে বলা হয় এই জেলায় বহু রাজা-জমিদারের বসবাস, এজন্য এ জেলার নাম হয়েছে রাজশাহী। কেউ বলেন রাজা গণেশের সময় (১৪১৪-১৪১৮) রাজশাহী নামের উদ্ভব। ১৯৮৪ সালে রাজশাহীর ৪টি মহকুমাকে নিয়ে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর এবং নবাবগঞ্জ- এই চারটি স্বতন্ত্র জেলায় উন্নীত করা হয়।

৮. সিরাজগঞ্জ জেলাঃ-
বেলকুচি থানায় সিরাজউদ্দিন চৌধুরী নামক এক ভূস্বামী (জমিদার) ছিলেন। তিনি তাঁর নিজ মহালে একটি ‘গঞ্জ’ স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় সিরাজগঞ্জ। কিন্তু এটা ততটা প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে ক্রমে তা নদীগর্ভে বিলীন হয় এবং ক্রমশঃ উত্তর দিকে সরে আসে। সে সময় সিরাজউদ্দীন চৌধুরী ১৮০৯ সালের দিকে খয়রাতি মহল রূপে জমিদারী সেরেস্তায় লিখিত ভুতের দিয়ার মৌজা নিলামে খরিদ করেন। তিনি এই স্থানটিকে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রধান স্থানরূপে বিশেষ সহায়ক মনে করেন। এমন সময় তাঁর নামে নামকরণকৃত সিরাজগঞ্জ স্থানটি পুনঃ নদীভাঙ্গণে বিলীণ হয়। তিনি ভুতের দিয়ার মৌজাকেই নতুনভাবে ‘সিরাজগঞ্জ’ নামে নামকরণ করেন। ফলে ভুতের দিয়ার মৌজাই ‘সিরাজগঞ্জ’ নামে স্থায়ী রূপ লাভ করে।

৬। রংপুর বিভাগঃ-
বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক পূণর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (National Implementation Committee for Administrative Reform:NICAR) ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি তারিখে রংপুরকে দেশের সপ্তম বিভাগ হিসেবে অনুমোদন দেয়। এর আগে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই তারিখে মন্ত্রীসভার বৈঠকে রংপুরকে বিভাগ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে একটি কমিটি তৈরি করা হয় এবং কমিটি ২১ জুলাই তারিখে প্রতিবেদন জমা দেয়।

১. দিনাজপুর জেলাঃ-
জনশ্রুতি আছে জনৈক দিনাজ অথবা দিনারাজ দিনাজপুর রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নামানুসারেই রাজবাড়ীতে অবস্থিত মৌজার নাম হয় দিনাজপুর। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসকরা ঘোড়াঘাট সরকার বাতিল করে নতুন জেলা গঠন করে এবং রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করে দিনাজপুর।

২. গাইবান্ধা জেলাঃ-
গাইবান্ধা নামকরণ সম্পর্কে কিংবদন্তী প্রচলিত আছ, প্রায় পাচ হাজার বছর আগে মৎস্য দেশের রাজা বিরাটের রাজধানী ছিল গাইবান্ধার গোবিন্দগজ থানা এলাকায়। বিরাট রাজার গো-ধনের কোন তুলনা ছিল না। তার গাভীর সংখ্যা ছিল ষাট হাজার। মাঝে মাঝে ডাকাতরা এসে বিরাট রাজার গাভী লুণ্ঠন করে নিয়ে যেতো। সে জন্য বিরাট রাজা একটি বিশাল পতিত প্রান্তরে গো-শালা স্থাপন করেন। গো-শালাটি সুরক্ষিত এবং গাভীর খাদ্য ও পানির সংস্থান নিশ্চিত করতে। নদী তীরবর্তী ঘেসো জমিতে স্থাপন করা হয়। সেই নির্দিষ্ট স্থানে গাভীগুলোকে বেঁধে রাখা হতো। প্রচলিত কিংবদন্তী অনুসারে এই গাভী বেঁধে রাখার স্থান থেকে এতদঞ্চলের কথ্য ভাষা অনুসারে এলাকার নাম হয়েছে গাইবাঁধা এবং কালক্রমে তা গাইবান্ধা নামে পরিচিতি লাভ করে।

৩. কুড়িগ্রাম জেলাঃ-
কুড়িগ্রাম জনপদ বেশ প্রাচীন। কুড়িগ্রাম-এর নাম করণের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। অনেকে মনে করেন গণনা সংখ্যা কুড়ি থেকে কুড়িগ্রাম হয়েছে। কারো মতে কুড়িটি কলু পরিবার এর আদি বাসিন্দা ছিল। তাই এর নাম কুড়িগ্রাম। কেউ বা মনে করেন, রংগপুর রাজার অবকাশ যাপনের স্থান ছিল কুড়িগ্রাম। প্রচুর বন-জঙ্গল ও ফল মূলে পরিপূর্ণ ছিল এই এলাকা, তাই ফুলের কুড়ি থেকে এর নাম হয়েছে কুড়িগ্রাম।
১৮০৯ সালে ডাঃ বুকালন হ্যামিলটন তাঁর বিবরণীতে বলেছেন-Kuriganj of which the market place is called Balabari in a place of considerable trade (martins Eastern India)। মিঃ ভাস তাঁর রংপুরের বিবরণীতেও এ অঞ্চলকে কুড়িগঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কুড়িগঞ্জ নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে কেউ কিছুই বলেননি। ১৯৮৪ সালের ২৩ শে জানুয়ারী ‘‘কুড়িগ্রাম’’ মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হয়।

৪. লালমনিরহাট জেলাঃ-
লালমনিরহাট নামকরণ নিয়ে জনশ্রুতি আছে যে, বৃটিশ সরকারের আমলে বর্তমান লালমনিরহাট শহরের মধ্যে দিয়ে রেলপথ বসানোর সময় উল্লিখিত অঞ্চলের রেল শ্রমিকরা বন-জঙ্গল কাটতে গিয়ে জনৈক ব্যক্তি ’লালমনি’ পেয়েছিলেন। সেই লালমনি থেকেই পর্যায়ক্রমে লালমনিরহাট নামের উৎপত্তি হয়েছে। অন্য এক সূত্র থেকে জানা যায়, বিপ্লবী কৃষক নেতা নুরুলদীনের ঘনিষ্ঠ সাথী লালমনি নামে এক ধনাঢ্য মহিলা ছিলেন। যার নামানুসারে লালমনিরহাট নামকরণ করা হয়েছে।
৫. নীলফামারী জেলাঃ-
প্রায় দুই শতাধিক বছর পূর্বে এ অঞ্চলে নীল চাষের খামার স্থাপন করে ইংরেজ নীলকরেরা। এ অঞ্চলের উর্বর ভূমি নীল চাষের অনুকূল হওয়ায় দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় নীলফামারীতে বেশি সংখ্যায় নীলকুঠি ও নীল খামার গড়ে ওঠে। ঊণবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দুরাকুটি, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, টেঙ্গনমারী প্রভৃতি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়। সে সময় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মধ্যে নীলফামারীতেই বেশি পরিমাণে শস্য উৎপাদিত মাটির ঊর্বরতার কারণে। সে কারণেই নীলকরদের ব্যাপক আগমন ঘটে এতদঅঞ্চলে। গড়ে ওঠে অসংখ্য নীল খামার। বর্তমান নীলফামারী শহরের তিন কিলোমিটার উত্তরে পুরাতন রেল স্টেশনের কাছেই ছিল একটি বড় নীলকুঠি। তাছাড়া বর্তমানে অফিসার্স ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত পুরাতন বাড়িটি ছিল একটি নীলকুঠি। ধারণা করা হয়, স্থানীয় কৃষকদের মুখে ‘নীল খামার’ রূপান্তরিত হয় ‘নীল খামারী’তে। আর এই নীলখামারীর অপভ্রংশ হিসেবে উদ্ভব হয় নীলফামারী নামের।

৬. পঞ্চগড় জেলাঃ-
“পঞ্চ” (পাঁচ) গড়ের সমাহার “পঞ্চগড়” নামটির অপভ্রমংশ “পঁচাগড়” দীর্ঘকাল এই জনপদে প্রচলিত ছিল। কিন্তু গোড়াতে এই অঞ্চলের নাম যে, ‘পঞ্চগড়ই’ ছিলো সে ব্যাপারে সন্দেহর কোন অবকাশ নেই। বস্তুত ভারতীয় উপমহাদেশে “পঞ্চ” শব্দটি বিভিন্ন স্থান নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যেমন- পঞ্চনদ, পঞ্চবটী, পঞ্চনগরী, পঞ্চগৌড় ইত্যাদি। “পঞ্চনগরীর” দূরত্ব পঞ্চগড় অঞ্চল থেকে বেশি দূরে নয়। পঞ্চগড় জেলায় বেশ কিছু গড় রয়েছে তাদের মাঝে উল্লেখ করার মত গড় হল ভিতরগড়, মিরগড়, রাজনগড়, হোসেনগড়, দেবনগড়। ‘পঞ্চ’ অর্থ পাঁচ, আর ‘গড়’ অর্থ বন বা জঙ্গল। ‘পঞ্চগড়’ নামটি এভাবেই এসেছে।

৭. রংপুর জেলাঃ-
রংপুর নামকরণের ক্ষেত্রে লোকমুখে প্রচলিত আছে যে পূর্বের ‘রঙ্গপুর’ থেকেই কালক্রমে এই নামটি এসেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে উপমহাদেশে ইংরেজরা নীলের চাষ শুরু করে। এই অঞ্চলে মাটি উর্বর হবার কারণে এখানে প্রচুর নীলের চাষ হত। সেই নীলকে স্থানীয় লোকজন রঙ্গ নামেই জানত। কালের বিবর্তনে সেই রঙ্গ থেকে রঙ্গপুর এবং তা থেকেই আজকের রংপুর। অপর একটি প্রচলিত ধারনা থেকে জানা যায় যে রংপুর জেলার পূর্বনাম রঙ্গপুর। প্রাগ জ্যোতিস্বর নরের পুত্র ভগদত্তের রঙ্গমহল এর নামকরন থেকে এই রঙ্গপুর নামটি আসে। রংপুর জেলার অপর নাম জঙ্গপুর । ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থাকায় কেউ কেউ এই জেলাকে যমপুর বলেও ডাকত। তবে রংপুর জেলা সুদুর অতীত থেকে আন্দোলন প্রতিরোধের মূল ঘাঁটি ছিল। তাই জঙ্গপুর নামকেই রংপুরের আদি নাম হিসেবে ধরা হয়। জঙ্গ অর্থ যুদ্ধ, পুর অর্থ নগর বা শহর। গ্রাম থেকে আগত মানুষ প্রায়ই ইংরেজদের অত্যাচারে নিহত হত বা ম্যালেরিয়ায় মারা যেত। তাই সাধারণ মানুষ শহরে আসতে ভয় পেত। সুদুর অতীতে রংপুর জেলা যে রণভূমি ছিল তা সন্দেহাতীত ভাবেই বলা যায়। ত্রিশের দশকের শেষ ভাগে এ জেলায় কৃষক আন্দোলন যে ভাবে বিকাশ লাভ করে ছিল তার কারণে রংপুরকে লাল রংপুর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।

৮. ঠাকুরগাঁও জেলাঃ-
ঠাকুরগাঁও এর আদি নাম ছিল নিশ্চিন্তপুর। ঠাকুরগাঁওয়ের নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে আর যা পাওয়া গেছে তাহলো, বর্তমানে যেটি জেলা সদর অর্থাৎ যেখানে জেলার অফিস-আদালত অবস্থিত সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে আকচা ইউনিয়নের একটি মৌজায় নারায়ণ চক্রবর্তী ও সতীশ চক্রবর্তী নামে দুই ভাই বসবাস করতেন। সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে তারা সেই এলাকায় খুব পরিচিত ছিলেন। সেখানকার লোকজন সেই চক্রবর্তী বাড়িকে ঠাকুরবাড়ি বলতেন। পরে স্থানীয় লোকজন এই জায়গাকে ঠাকুরবাড়ি থেকে ঠাকুরগাঁও বলতে শুরু করে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারী ৫টি থানা নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৭। সিলেট বিভাগঃ-
১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১ আগষ্ট সিলেট দেশের ষষ্ঠ বিভাগ হিসাবে মর্যাদা পায়।

১. হবিগঞ্জ জেলাঃ-
সুফি-সাধক হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অনুসারী হযরত সৈয়দ নাসির উদ্দীন (রঃ) এর পূর্ণস্মৃতি বিজড়ি খোয়াই, কারাঙ্গী, বিজনা, রত্না প্রভৃতি নদী বিধৌত হবিগঞ্জ একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন জনপদ। ঐতিহাসিক সুলতানসী হাবেলীর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সুলতানের অধঃস্তন পুরুষ সৈয়দ হেদায়েত উল্লাহর পুত্র সৈয়দ হাবীব উল্লাহ খোয়াই নদীর তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নামানুসরে হবিগঞ্জ নামকরণ করা হয়। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ হবিগঞ্জ জেলায় উন্নীত হয়।

২. মেীলভীবাজার জেলাঃ-
হয়রত শাহ মোস্তফা (র:) এর বংশধর মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি মনু নদীর উত্তর তীরে কয়েকটি দোকানঘর স্থাপন করে ভোজ্যসামগ্রী ক্রয় বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেন। মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ প্রতিষ্ঠিত এ বাজারে নৌ ও স্থলপথে প্রতিদিন লোকসমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমের মাধ্যমে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে মৌলভীবাজারের খ্যাতি। মৌলভী সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ এই অঞ্চলের নাম হয় মৌলভীবাজার। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২২শে ফেব্রুয়ারী মৌলভীবাজার মহকুমাটি জেলায় উন্নীত হয়।

৩. সুনামগঞ্জ জেলাঃ-
‘সুনামদি’ নামক জনৈক মোগল সিপাহীর নামানুসারে সুনামগঞ্জের নামকরণ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ‘সুনামদি’ (সুনাম উদ্দিনের আঞ্চলিক রূপ) নামক উক্ত মোগল সৈন্যের কোন এক যুদ্ধে বীরোচিত কৃতিত্বের জন্য সম্রাট কর্তৃক সুনামদিকে এখানে কিছু ভূমি পুরস্কার হিসাবে দান করা হয়। তাঁর দানস্বরূপ প্রাপ্ত ভূমিতে তাঁরই নামে সুনামগঞ্জ বাজারটি স্থাপিত হয়েছিল। এভাবে সুনামগঞ্জ নামের ও স্থানের উৎপত্তি হয়েছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে।

৪. সিলেট জেলাঃ-
প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এ অঞ্চলকে বিভিন্ন নামের উল্লেখ্য আছে। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে শিবের স্ত্রী সতি দেবীর কাটা হস্ত (হাত) এই অঞ্চলে পড়েছিল, যার ফলে ‘শ্রী হস্ত’ হতে শ্রীহট্ট নামের উৎপত্তি বলে হিন্দু সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের ঐতিহাসিক এরিয়ান লিখিত বিবরণীতে এই অঞ্চলের নাম “সিরিওট” বলে উল্লেখ আছে। এছাড়া, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে এলিয়েনের (Ailien) বিবরণে “সিরটে”, এবং পেরিপ্লাস অব দ্যা এরিথ্রিয়ান সী নামক গ্রন্থে এ অঞ্চলের নাম “সিরটে” এবং “সিসটে” এই দুইভাবে লিখিত হয়েছে। অতঃপর ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে যখন চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে এ অঞ্চলের নাম “শিলিচতল” উল্লেখ করেছেন তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী দ্বারা বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশে মুসলিম সমাজব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটলে মুসলিম শাসকগণ তাঁদের দলিলপত্রে “শ্রীহট্ট” নামের পরিবর্তে “সিলাহেট”, “সিলহেট” ইত্যাদি নাম লিখেছেন বলে ইতিহাসে প্রমাণ মিলে। আর এভাবেই শ্রীহট্ট থেকে রূপান্তর হতে হতে একসময় সিলেট নামটি প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন। এছাড়াও বলা হয়, এক সময় সিলেট জেলায় এক ধনী ব্যক্তির একটি কন্যা ছিল। তার নাম ছিল শিলা। ব্যক্তিটি তার কন্যার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি হাট নির্মাণ করেন এবং এর নামকরণ করেন শিলার হাট। এই শিলার হাট নামটি নানাভাবে বিকৃত হয়ে সিলেট নামের উৎপত্তি হয়।

তথ্য সূত্রঃ-জেলা তথ্য বাতায়ন,বাংলা পিডিয়া, উইকিপিডিয়া, যশোর ইনফো, নেত্রকোণার আলো এবং বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত।

TrafficMonsoon এ কাজ করবেন কিভাবে ( How to work on TrafficMonsoon)

আগের অন্যান্য সাইটের মত এটিও একটি ভালো মানের পিটিসি সাইট
প্রথমে এখান থেকে  আপনার একাউন্ট রেজিস্টার করে নিন ।



ফ্রি মেম্বার হিসেবে আপনি প্রতিদিন ১০ টি পেইড এড পাবেন, আর এই পেইড এড পাওয়ার জন্য আপনাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ টি একটিভেশন এড দেখতে হবে।
তাহলে আপনার প্রথম কাজ হবে একটিভেশন এড দেখা।
১। আপনার একাউন্টে লগিন করুন, এবার নিচের ছবির মত start surfing  ক্লিক করুন ।






২। এবার আপনার এড দেখা শুরু হবে , প্রতিটি এড ২০ সেকেন্ড করে দেখতে হবে। ১ টা এড দেখা হলে ক্যাপচা পুরন করে Next site  এ ক্লিক করুন।( নিচের ছবিতে পর্যায়ক্রমে দেখান হয়েছে )


এভাবে আপনি ১০ টা এড দেখবেন, আর আপনি যদি বেশি দেখেন তাহলে তার বিনিময়ে আপনি আপনার যেকোন ওয়েব সাইটে ভিজিটর পাবেন। যেমন এখানে আপনি ২ টা এড দেখলে তার বিনিময়ে আপনি ১ টা ভিজিট পাবেন।
৩। ১০ টা একটিভেশন এড দেখলে আপনি পরের দিন ৫-১০ টা পেইড এড পাবেন ( নিচের  ছবির মত)


৪। এবার Claim এ ক্লিক করে একটিভেশন এড দেখার মত করে এই এড গুলোও দেখুন

আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
এরপরেও সমস্যা হলে আমি আছি ফেসবুকে
আর যেকোন সমস্যায় ফেসবুক গ্রুপে  যোগাযোগ করতে পারেন
আরও ভালো কিছু সাইটের লিস্ট আছে এখানে

সময় দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।

অনলাইনে বাংলায় প্রগ্রামিং শেখার আসর

এই ব্লগটি সাধারনত অনলাইন থেকে কিছু অর্থ  উপার্যন বিসয়ক  কিছু  টিপস
এবং ওয়েব পেজ ডেভলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে
লেখা হয় তেমন একটি ব্লগ এর  সাথে পরিচয় করিয়ে দেব এখান থেকে আপনার
চাহিদা অনুযায়ী প্রোগ্রামিং শিখতে পারবেন  ব্লগটি bangla.salearningschool.com এখানে সবকিছু  বাংলা
ভাষায় বিস্তারিত বর্ননা করা আছে।সহজে সবকিছু শিখতে পারবেন।আশাকরি এই
ব্লগটি ভিজিট করলে আপনি অনেক উপকৃত হবেন।

রেস্তরাঁর মত চিকেন ফ্রাই তৈরি করার গোপন টিপস!

চিকেন ফ্রাই একেক রাঁধুনি তৈরি করেন একেকভাবে। তবে সকলেরই উদ্দেশ্য থাকে একটাই, দোকানের মত মুচমুচে করে তৈরি করা। আপনার চিকেন ফ্রাই কি রেস্তরাঁর মত হয় না? একদম পারফেক্টলি মুচমুচে হয়না বাইরের লেয়ারটা বা বেশিক্ষণ ক্রিসপি ভাব থাকে না, ঠাণ্ডা হলেই নেতিয়ে যায়? তাহলে জেনে নিন আতিয়া আমজাদের পারফেক্ট রেসিপি, যার মাঝে লুকিয়ে আছে গোপন কিছু কৌশল। হলফ করে বলা যায়, এমন রেসিপি আপনি আগে জানতেন না মোটেও।

স্বাদের জাদু লিকিয়ে আছে চিকেন মেরিনেশনের মাঝেই

-চামড়া সহ ১ কেজি ওজনের ১টি ফার্মের মুরগী ৪ টুকরা করা (চামড়া সহ)
- ঘন দুধ ১/২ কাপ
- টেস্টিং সল্ট ১ চা চামচ
- বেকিং সোডা ১ চা চামচ
- কর্ন ফ্লাওয়ার ২ টে চামচ
- চিলি সস ১ টে চামচ
- ওয়েস্টার সস ১ চা চামচ
- কালো গোলমরিচের গুঁড়ো ১ চা চামচ
- লবণ ২ চা চামচ
- লেবুর খোসা গ্রেট করা ২ টে চামচ

-সব কিছু একসাথে মিলিয়ে মুরগির টুকরোগুলো অন্তত ১০ ঘন্টা মেরিনেট করে রাখুন। সারা রাত রাখতে রাখতে পারলে তো খুবই ভালো।

তৈরি করে নিন ব্যাটার

- ময়দা ১/২ কাপ
- লাল গুঁড়ো মরিচ ১ চা চামচ
- কর্ন ফ্লাওয়ার ২ টে চামচ
- চিলি সস ১ চা চামচ
- লবণ ১/২ চা চামচ
- পানি পরিমান মতো

-সবকিছু পানি দিয়ে গুলে ব্যাটার রেডি করে রাখুন।

এবার পালা কোটিং-এর

- কর্ন ফ্লেক্স ১ কাপ সেমি ক্রাশ করা
- ব্রেড ক্রাম্ব ১ কাপ
- টেস্টিং সল্ট ১/২ চা চামচ
- প্যাপরিকা পাউডার ১ চা চামচ

-একটা পলিথিন ব্যাগে সব কিছু ঢেলে ভালো ভাবে ঝাঁকিয়ে মিশিয়ে নিন।

এছাড়া আরও রাখুন ভাজার জন্য তেল ১ লিটার। তেলে কিপটেমি করলে কিন্তু চিকেন ফ্রাই ভালো হবে না মোটেও।


যেভাবে করবেন পারফেক্ট চিকেন ফ্রাই

  •     প্রথমেই চিকেনের পিসগুলোকে ১৫ মিনিট স্টিম করে বা ভাপিয়ে নিতে হবে।
  •     এবার একটা করে চিকেনের পিস ব্যাটারে চুবিয়ে কোটিং এর ব্যাগে ভরে ভালো করে ঝাঁকান।
  •     এবার ডুবো তেলে ৫ মিনিট ভেজে তুলে তেল ঝরিয়ে নিন।ক্রিসপি কোটিং-এর জন্য পুনরায় ভাজা চিকেনের    পিস গুলোকে ব্যাটারে চুবিয়ে শুকনো মিশ্রণে কোটিং করে আবারো ডুবো তেলে সোনালী করে ভেজে তুলুন এবং তেল ঝরিয়ে নিন। ডাবল লেয়ার করতে না চাইলেও কোন সমস্যা নেই। একবারই ব্যাটারে চুবান ও কোটিং করুন। সেক্ষেত্রে ভাজার আগে ফ্রিজে রেখে দিন এক ঘণ্টা। কমপক্ষে আধা ঘণ্টা। এবং অবশ্যই চামড়াসহ নিন মুরগির টুকরোগুলো।
  •     গরম গরম পরিবেশন করুন সস এর সাথে।
    ফ্রায়েড চিকেনের ক্রিসপ ভাব চলে গেলে ইলেক্ট্রিক ওভেনে কম তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট রেখে দিন। আবারো মুচমুচে হয়ে যাবে।

যেখানে মানুষ আসে শুধুমাত্র আত্ম-হত্যা করার জন্য !

 পৃথিবীতে এমন কিছু স্থান আছে যেগুলোর কথা জানলে ও শুনলে আমরা অবাক হই এবং এমন কিছু স্থান আছে যেগুলোর কথা শুনলে শুধু অবাকই হইনা সেগুলোর প্রতি আমাদের জানার আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।

তেমনি একটি অদ্ভুত জায়গা যেটি জাপান শহরের মাউন্ট ফুজি পাহাড়ের উত্তর পাদদেশে অবস্থিত। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের এই জায়গাটি সুদীর্ঘ ও বিশাল বিশাল সবুজ গাছগাছালি দ্বারা নিভৃত। এই জায়গাটির নেপথ্যের কথা জানলে অবাক হতে হয় যে এখানে মানুষ আসে শুধুমাত্র আত্ম-হত্যা করার জন্য। যদিওবা কিছু কিছু ব্যক্তি এখানে আসেন তদন্তমুলক কাজ করতে তবে বেশির ভাগের উদ্দেশ্য আত্মহত্যা।

এই রহস্যময় জঙ্গলটির নাম “Aokigahara”। এটি পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় স্থান, যার কারন আজ পর্যন্ত জানতে পারেননি পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা। আওকিগাহারা একটি বন যেটি মাউন্ট ফুজির পাদদেশে এবং টোকিও শহর থেকে ১০০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এটি “জুকাই” নামে পরিচিত। স্থানীয়দের ভাষায় জুকাই শব্দের অর্থ “গাছের সাগর”। এই বনটিতে থাকা গাছের উচ্চতা ও ঘনত্ব অনেক বেশি। এটি ভ্রমণকারীদের জনপ্রিয় মাউন্ট ফুজি পাহাড়ের দুই গুহা “বরফ গুহা ও বায়ু গুহার” নিকটেই অবস্থিত।
 আওকিগাহারা সুইসাইড ফরেস্ট নামেও পরিচিত যার আয়তন ৩৫ বর্গ কিলোমিটার। এই সুবিস্তৃত বনটি কঠিন পাথর ও বরফ গুহা দ্বারা সমৃদ্ধ। এই সুবিশাল বনটির গাছগুলোর ঘনত্ব এত বেশি যে, এর মধ্যে একবার ঢুঁকলে নিশ্চিত পথ হারিয়ে ফেলবে। জানা যায় যে অনেক আগ্রহী দর্শনার্থী এর মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন এবং তাদের পথ নির্দেশনা ঠিক রাখতে তারা প্লাস্টিক টেপ ব্যবহার করেছিলেন কিন্তু তাদেরও কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের মতে এই বনের মধ্যে কেউ একবার প্রবেশ করলে তার এমন মায়ার সৃষ্টি হয় যে সে আর ফিরে আসতে পারে না। এক সময় সে তার অতীত কাহিনী পর্যালোচনা শুরু করে এবং নিষ্ঠুরভাবে নিজেকে নিজেই শেষ করে দেয়। এমনকি জাপানিরা এই জায়গাটিকে অভিশপ্ত ভাবে তাই অনেকেই এই জায়গায় আসার সাহস করে না। যার কারনেই আজও এই জায়গাটি রহস্যময় থেকে গেছে।

এমনকি আপনি যদি ভুতের গল্পের প্রতি আকৃষ্ট নাও থাকেন তারপরও এই স্থানটির একটি বিশেষ অনুভুতি আছে। Seicho Matsumoto একজন বিখ্যাত জাপানি লেখক তার ১৯৬০ সালে প্রকাশিত “KuroiJukai”উপন্যাসে লিখেন একজন যুবক প্রেমিক এখানে আত্ম-হত্যা করেন। এছাড়াও CNN-এররিপোর্ট থেকে জানা যায়, তারু নামের ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ছিলেন যিনি লোহা তৈরির কারখানায় কাজ করতেন যাকে একসময় তার কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সে প্রচণ্ড হতাশা, গ্লানি আর তার পরিবারের দায়ভার চালাতে পারবে না এই ভেবে সে চলে যায় সুইসাইড খ্যাঁত ফরেস্ট আওকিগাহারাতে। তার চিরকুট হতে পাওয়া তথ্য মতে সে বলেছিল, “আমি অদৃশ্যভাবে এখানে থাকতে চাই, আমি আমার পরিচয় হারিয়ে ফেলেছি তাই আমি এখানে”।
এই বনটি দিন দিন আত্মহত্যার জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা হয়ে উঠছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখানে প্রতিবছর গড়ে ১০০টিরও বেশি মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে মোট ১০৫টি মৃতদেহ পাওয়া যায় যা ২০০২ সালের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। ১৯৯৮ সালে ৭৩টি, ১৯৯৯ সালে ৬৮টি, ২০০০ সালে ৫৯টি, ২০০১ সালে ৫৯টি ও ২০০২ সালে ৭৮টি মৃতদেহ পাওয়া যায়।
সর্বশেষ সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে মোট ২৪৭টি মৃতদেহ পাওয়া যায়, যা সর্বকালের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। স্থানীয় সরকার কঠোর ভাবে এই আত্মহত্যার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। স্থানীয় সরকার পুলিশ, সেবাকর্মী ও অবস্থানরত সাংবাদিকদের মাধ্যমে আত্মহত্যা করতে আসা লোকদের সাহায্য ও তাদের আত্মহত্যা না করতে উদ্ভুত্ত করে যাচ্ছে।

জাপানে আত্মহত্যার হার ইতিমধ্যে বিশ্বে সর্বোচ্চ যার একটি বড় কারন দেশটির চলমান অর্থনৈতিক মন্দা। দেশটিতে জানুয়ারি ২০০৯ সালে রেকর্ড পরিমান ২৬৪৫টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে যা জানুয়ারি ২০০৮ সালে ছিল ২৩০৫টি। এক বছরে আত্মহত্যার হার ১৫% বেড়ে যায়। জাপান সরকার বলেছেন যে, দেশে আত্মহত্যার পরিমান এমন ভাবে বেড়ে যাচ্ছে যা ২০১৬ সালে ২০% পর্যন্ত বাড়তে পারে।

দেশটি স্কুলে এবং কর্মস্থলে আত্মঘাতী সচেতনতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কর্মকর্তারা ভয় পাচ্ছেন যে এতে করে উপশুল্ক বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি হবেবেকারত্ব ও দেউলিয়ার। Toyoki Yoshida একজন আত্মহত্যা ও ক্রেডিট পরামর্শদাতা তিনি বলেন যে, “বেকারত্বই আত্মহত্যার মূল কারন”।

সমাজ ও সরকারের উচিত অতিবিলম্বে আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রতিবিধান স্থাপন করা। সরকারের উচিত আরও বেশি করে কর্মস্থল তৈরি করা ও যারা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত তাদের মানসিক প্রশান্তির সুব্যবস্থা করা।

২ বছরের গর্ভবতী ছেলে শিশু

২ বছরের ‘গর্ভবতী’ ছেলে শিশুর পেট থেকে বের হল যমজ সন্তানের ভ্রƒণ। যন্ত্রণায় ছটফট করছিল চীনের ২ বছরের শিশু। পেটটা কেমন ফুলে উঠেছিল, শ্বাসও নিতে কষ্ট হচ্ছিল খুব। হাসপাতালে নিয়ে যেতেই সবার চক্ষুচড়ক গাছ। ২ বছরের সেই ছেলে শিশুর পেটে অস্ত্রপচারের পর বেরিয়া এল যমজ সন্তান। ২ বছরের বাবা, থুড়ি মা, থুড়ি জš§দাতার নাম জিও ফেং। ডাক্তাররা বললেন, ফংয়ের পেটের মধ্যে ছিল অপুষ্ট ভ্রƒণ এবং অস্ত্রপচারের পর সেই ভ্রƒণ নষ্ট করা হয়। ফেংয়ের পেটের মধ্যে থাকা ভ্রƒণ দুটো ছিল যমজ। ফংয়ের পেটে থাকা ভ্রƒণ নষ্ট করে না দিলে সে মারা যেতে পারত, তাই ডাক্তাররা ঝুঁকি নেননি।

ছাগলও গাছে চড়ে

পেটে টান পড়লে ছাগলও ঘাস খায় কিংবা অমুক রাজার শাসনামলে বাঘে-ছাগলে একঘাটে পানি খেতো- প্রবাদ প্রবচনের বদৌলতে এসব শ্র“তিমধুর কল্পকাহিনীর গল্পরাজ্যে একটু-আধটু যাওয়া-আসা থাকলেও ছাগল গাছে চড়ে এ রকম আষাঢ়ে গল্পের হাটে আজ পর্যন্ত বোধহয় কেউ-ই সওদা করেনি! চাক্ষুষ দেখার পরেও হয়তো অনেকেরই দৃষ্টিভ্রম মনে হবে। এমনকি অতি অবিশ্বাসে শরীরে একটু চিমটি কেটে নিজের সজ্ঞানে অস্তিত্বটুকুর পরখ নেয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তারপরও যে সত্যটা টিকে থাকে তা হল ছাগল বাস্তবেই গাছে ওঠে!
অবিশ্বাস্য এই দৃশ্যটি দেখা যায় আফ্রিকার দেশ মরক্কোর ছোট্ট গ্রাম তামিরিতে। এই গ্রামের ছাগলগুলো খাদ্যের সন্ধানে অনায়াসে চড়তে পারে গাছে। অরগ্যান নামের ওই গাছের জামের মতো মিষ্টি ফল খুবই পছন্দ ছাগলের। এখানেই শেষ নয়, আরও যে বিষয়টি থেকে যায় তা হল- গাছগুলো কিন্তু সাধারণ পেয়ারা গাছের মতো ছোট নয়। পূর্ণবয়স্ক একটি অরগ্যান গাছের উচ্চতা ১৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
গাছের মিষ্টি ফল খেতেই মূলত গাছে চড়ে ছাগলগুলো। এর জন্য তাদের অতিরিক্ত ভারসাম্য রাখতে হয় শরীরের, যেটা চতুষ্পদী এমন জন্তুর জন্য খুবই কঠিন কাজ। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, মরক্কোর দুর্ভিক্ষপ্রবণ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতেই ছাগলগুলো খাবারের জন্য গাছে উঠতে শিখেছে। উল্লেখ্য, মরক্কোই সবচেয়ে ছোট পানির বোতলটির দামও পঞ্চাশ পাউন্ড।
শুধু তাই নয়, বেরিস নামক ফলগুলো খেলে এর ভেতরের বীজটাও তার অসাধারণ দক্ষতায় নিচে ফেলে দেয় খুব দ্রুততার সঙ্গে। এটা ব্যবহার করা হয় সার হিসেবে। এটা পিষে অরগ্যান তেলও তৈরি হয়। হাফিংটন পোস্ট।

ভয়ংকর চেহারার মাছের সন্ধান

মাছটির মুখে হাতির মতো বড় দুটি কাঁটাযুক্ত গজদাঁত। মুখটিও বিকট দেখতে। কুমিরের মতো খাঁজযুক্ত কাটা চলে গেছে মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত।

ভয়ংকর দেখতে এই মাছটি সম্প্রতি ধরা পড়েছে মালয়েশিয়ার দক্ষিণ চীন সাগরের বোর্নিয় উপকূলীয় অঞ্চলে।

ডেইলি মেইলের বরাতে জানা যায়, মাছটি ধরা পড়‍ার পর শিকারি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হন। মাছটি শনাক্ত করতে রীতিমতো গলদঘর্ম হন তারা।

স্থানীয়রা প্রাথমিকভাবে মাছটির নাম দিয়েছে ‘অ্যারমার ফিশ’ বা বর্ম মাছ। মাছটির মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত ধারালো কাঁটাযুক্ত স্পাইন চলে গেছে। তবে লেজের দিকে এসে হয়ে গেছে ছোট। যা দেখতে একবারের বর্মের মতো। এজন্যই হয়তো এই নামকরণ।
মাছটি ধরার পর সাপার মনসুর বোর্নিও পোস্টকে বলেন, আমি আমার জীবনে প্রথম এই ধরনের মাছ দেখলাম এবং ধরলাম। তাই মাছটি ধরার পর এটি আমার স্ত্রীর জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, আমি আমার বন্ধুদের নিযে সমুদ্রে বোটে করে ঘুরছিলাম। এক পর্যায়ে আমরা মাছ ধরতে শুরু করি এবং বিরল এ মাছটি ধরি।

সাপার স্ত্রী সিটি বলেন, আমার স্বামী মাছটির বাড়ি আনার পর আমি বিস্মিত হয়েছি। আমার বাচ্চারাও খুব খুশি।

দেশটির সংরক্ষিত এলাকা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিভাগ সারওয়াক ফরেস্ট্রি করপোরেশন মাছটির শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে।

মাছটি বর্তমানে সাপার বাড়িতেই সংরক্ষিত আছে। সঠিক প্রজাতি জানা গেলে বিশ্বের মাছের তালিকায় যুক্ত হবে আরও একটি নতুন মাছ।

ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে মৃত্যুশয্যায় যুবক

ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় জাহিদুল ইসলাম (২৮)। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে রাজধানীর মিরপুর-২ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে।

জাহিদুল ইসলামের বয়স (২৮) বছর। তিনি এমএ ফজল অ্যান্ড কোং নামের একটি প্রতিষ্ঠানে সিএ পড়ছেন। বাবার নাম আব্দুল মতিন। বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া। তিনি থাকেন মিরপুরের কাজীপাড়ায়।

তার বান্ধবী সাবিনা ইয়াসমিন টিনাও (২৫) আহত হয়েছেন। টিনার বাড়ি মিরপুর-১১ বেনারসি পল্লী এলাকায়।

জাহিদুলের সহপাঠী রিয়াজ হায়দার জানান, সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টার দিকে জাহিদুল ও টিনা মিরপুর-১ থেকে শপিং করে ব্যাটারি চালিত রিকশোযোগে মিরপুর ১০ এ ফিরছিলেন। হঠাৎ মোটরসাইকেল যোগে দেই যুবক এসে টিনার ভ্যানিটি ব্যাগ ও ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে দুজনেই রিকশা থেকে পড়ে যান। এসময় টিনার ডান হাত ভেঙে যায় এবং জাহিদুলের মাথায় মারাত্মক জখম হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হলে প্রথমে তাকে মিরপুর গ্যালাক্সি হসপিটালে পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দশ টাকায় রাতঘুম

মাথার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ি; সাঁই সাঁই করে, বিকট শব্দে। মানুষের হাক ডাক আর চিৎকার চেঁচামেচিতো আছেই। ধুলোবালির কথা না হয় বাদ গেলো। আর কাঁথা-বালিশ- ওসব স্বপ্নে থেকে যাক। ছাদ হিসেবে আকাশই তো যথেষ্ট! তবুও একটু ঘুমানো চাই। রাত হয়েছে অনেক।

রাজধানীতে যাদের ঘুমানোর কোনো জায়গা নেই, ফুটপাতই তাদের উপযুক্ত স্থান। একপাশে কুকুর বসে ঝিমায়, অন্যপাশে দিব্যি ঘুমায় মানুষ। এরা দিন মজুর, ভিক্ষুক আর ছিন্নমূল। কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। শেষ পর্যন্ত ফুটপাতই বেছে নেয় একটুখানি চোখ বুঁজে জিরোবার জন্যে।

কিন্তু এতেও বিপত্তি কম না। মশার উৎপাত, বৃষ্টি এলে তো নির্ঘুম কাটাতে হয়। সাথে দারোয়ান, পুলিশের বখরা তো আছেই। তবুও একটু ঘুমানো চাই।

বৃহস্পতিবার রাত তখন দেড়টা। কাওরান বাজারের ঠিক উল্টোদিক। সারিবদ্ধভাবে ঘুমোচ্ছে মানুষগুলো। মাথার নিচে হাত রেখে বালিশের কাজ সেরেছে অনেকে। কেউ কেউ খুঁজে আনা ইট কিংবা সঙ্গে থাকা ব্যাগকেই বালিশ হিসেবে ব্যবহার করছে। আর যাদের এসবও নেই, তারা বালিশহীন অবস্থাতেই পাড়ি জমিয়েছে ঘুমের দেশে।

এসব যেন তাদের জন্য কোনো বাধাই নয়। বড় বাধা হচ্ছে বৃষ্টি আর বখরা চাইতে আসা (অ)মানুষগুলো। মাঝরাতে লাঠির গুঁতো দিয়ে ঘুম ভাঙে। দশ টাকা হাতের মুঠোয় গুঁজে দিলেই সব ল্যাঠা চুকে যায়। আর এতে যাদের আপত্তি, তাদের ঘুম সে রাতের জন্য হারাম।

কথাগুলো জানিয়েছেন মধ্যবয়সী সোলায়মান মুন্সী। রংপুরের মিঠাপুকুর থানায় বাড়ি। ঢাকায় এটা সেটা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। চরম ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘টাকা পাইলে সব ঠিক, না হয় ঘুমাতেও দ্যায় না।’

‘দে ট্যাকা দে’ আওয়াজটা তখনই কানে এলো। ফিরে তাকানোর আগেই ‘ঠাস’ করে আরও একটা শব্দ পেলাম। একটি বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানির পোশাক পরা এক গার্ড শাসাচ্ছে কয়েকজনকে। যেনো ওর বহুদিনের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ধমকাচ্ছে।

একটু সামনেই পুলিশের একটি গাড়ি দাঁড়ানো। এক পুলিশ সদস্যও দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছেন। ‘কিরে হয় নাই?’ বলে পুলিশটি তাড়া দিলেন সিকিউরিটি গার্ডকে অথবা লোকটিকে। ততোক্ষণে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেলো, এ সিকিউরিটি গার্ডের কণ্ঠে এতো জোর ধমক কোত্থেকে আসে!

সদ্য ঘুম থেকে ওঠা মানুষগুলো যেনো ‘ভূত’ দেখার মতো আঁতকে উঠে কোমরে গুঁজে রাখা ভাঁজ করা টাকা থেকে দশ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কোনো প্রতিবাদ নেই। কীসের টাকা, সে হিসাব জানারও প্রয়োজন বোধ করেনি কেউ। উল্টো যোনো দশ টাকা দিয়ে রেহায় পেলেই বাঁচে।

অন্তত একশ জনের কাছ থেকে এ টাকা উঠানোর কাজটি সুন্দরভাবেই সারলেন গার্ড। টাকা গুনে নিয়ে যেতে যেতে বলেও বসলেন, ‘ট্যাকা না দিয়া ঘুমাইবি? তোর বাপে দিবো ট্যাকা।’

কার বাবার জায়গায় কে যে টাকা তোলে বিষয়টা নিয়ে তখনই লেগে গেলো খটকা। তখনই উক্তিটির চরম বাস্তবতা আনমনে ভেসে এলো- জোর যার মুল্লুক তার।

পুলিশের গাড়িটির ইঞ্জিন গর্জে উঠলো। কনস্টেবল আগে থেকেই বুকের নেমপ্লেট খুলে রেখেছেন। তাই নামটা উদ্ধার করা যায়নি। গার্ডের কাছ থেকে নিজের মতো করেই বুঝে নিলেন টাকাগুলো। এ যেনো নিয়মিত দায়িত্বেরই অংশ। গার্ডের হাতেও কিছু টাকা গুঁজে দিতে ভুল করলেন না।

পুলিশের গাড়ি চলে গেলো। গার্ড তখনই বলে উঠলেন, ‘সব শালা ধান্দাবাজ। তুইলা দিলাম এক হাজার ট্যাকাআর আমারে দিলো ৫০ ট্যাকা। শালা পুলিশের জাতই...(উচ্চারণ অযোগ্য)।’

এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে জানা নেই। তবে দশ টাকা দেয়ার পর মানুষগুলোর ঘুমে আর কোনো ব্যাঘাত হবে না এটাই এই মুহূর্তে একটু প্রশান্তি দিল!

১৪ ফুট লম্বা গোঁফ!

রাম সিং চৌহানের মুখ জুড়ে গোঁফ। দৈর্ঘ্যে ১৪ ফুট। বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হওয়ারই কথা। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোঁফ রেখে অনন্য রেকর্ড গড়েছেন রাম সিং-এটি আর এখন অবিশ্বাস করার জো নেই। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম লিখিয়েছেন রাম সিং। জানা যায়, ভারতের জয়পুরের এ নাগরিক ৩২ বছর ধরে গোঁফ কাটেননি। ১৯৭০ দশক থেকে তিনি গোঁফের পরিচর্যা শুরু করেন। রাম সিং দৈনিক দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন গোঁফের পরিচর্যায়। তার গোঁফের আকৃতি সত্যিই অসাধারণ। প্রতিদিন নারকেল তেল, অলিভ অয়েল দিয়ে গোঁফের পরিচর্যা করেন রাম সিং। দৈনিক ভোরবেলায় গোঁফে কাপড় পেঁচিয়ে যোগ ব্যায়াম করেন তিনি। গোসলের পর বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে গোঁফ শুকাতে গেলে তার স্ত্রী নিচ থেকে সেটি ধরতে পারেন। গোঁফের যত্ন সম্পর্কে রাম সিং বলেন, গোঁফ পরিচর্যা অনেকটা শিশু প্রতিপালনের ন্যায়। ১৪ ফুট লম্বা গোঁফের পেছনে জীবনের বড় একটি সময় আমাকে ব্যয় করতে হয়েছে। এটি সহজ কোনো কাজ নয়। গোঁফ বড় করে রেকর্ড গড়া রাম সিং আরও বলেন, গোঁফ রাখার সঙ্গে নিঃসন্দেহে সম্মান জড়িত। প্রাচীনকালে ভারতে প্রায় প্রত্যেক বিখ্যাত ব্যক্তিরই গোঁফ ছিল। তাই বড় গোঁফ রাখতে পেরে আমি গর্বিত। জানা যায়, ইতালি ও জার্মানিতে রাম সিংয়ের গোঁফের প্রদর্শনী হয়েছে। তিনি রাজস্থান ট্যুরিজম বিভাগের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। পর্যটন স্পটে দর্শনার্থীদের বিশালাকৃতির গোঁফ দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেওয়া তার অন্যতম দায়িত্ব ছিল। বর্তমানে তার ছেলে তাকে অনুসরণ করে গোঁফের যত্ন নেওয়া শুরু করেছেন। ডেইলি মেইল।


তুরস্কে সমুদ্র তলদেশের কমিউটার ট্রেনের উদ্বোধন

সমুদ্র তলদেশে চলাচলে সক্ষম কমিউটার ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করল তুরস্ক। মঙ্গলবার এ ট্রেনের উদ্বোধন করে দেশটির সরকার। ট্রেন চলাচলের জন্য মারমারে নামের সমুদ্র তলদেশের টানেল এশিয়া ও ইউরোপকে যুক্ত করবে।

ট্রেনটি প্রতিঘণ্টায় ৭৫ হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে। এ ট্রেনের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ যাত্রী বহন করা সম্ভব হবে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল ও প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এদ্রোগান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দেশটিতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ৯০তম বার্ষিকী উদযাপনে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করে সরকার।

এ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ইস্তাম্বুলের ভয়াবহ যানজট নিরসন করা ও বসফরাস প্রণালির দু’প্রান্তে যাতায়াতে সময় বাঁচানো। বসফরাসের একদিকে ইউরোপ ও অন্যদিকে এশিয়া অবস্থিত।

এ টানেল নির্মাণে নয় বছর সময় লাগে। আর এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিয়ে করছেন বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পুরুষ

বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পুরুষ সুলতান কোসেনের সব দুশ্চিন্তার যেন অবসান হলো। কোনো মেয়ে তার জীবনসঙ্গী হবেন কী না-এ নিয়ে তিনি ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলেন। অবশেষে এক তুর্কি তরুণী তার সঙ্গে ঘর বাধতে রাজি হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তার সে চিন্তার অবসান হলো।

তুরস্কের এ তরুণ লম্বায় আট ফুট তিন ইঞ্চি। হাতের দৈর্ঘ্য ২৭ দশমিক পাঁচ সেন্টিমিটার ও পায়ের দৈর্ঘ্য ৩৬ দশমিক পাঁচ সেন্টিমিটার। যাকে তিনি সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন তার উচ্চতা পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি।

৩০ বছর বয়সী সুলতান রবিবার তুরস্কে নিজ বাসভবনে নিজের চেয়ে উচ্চতায় দুই ফুট সাত ইঞ্চি ছোট ২০ বছর বয়সী দীবোর সঙ্গে আংটি বদল করেন। শিগগিরই তারা বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন বলে জানা গেছে।
জীবনের সঙ্গী পেয়ে উল্লসিত সুলতান বলেন, ‘আমি অনেক চিন্তায় ছিলাম কাউকে সঙ্গী হিসেবে পাবো কিনা। তবে শেষ পর্যন্ত দীবো আমার জীবনে এলো। আমি অনেক শিহরিত।’

কোসেন পেশায় একজন কৃষক। সুলতানকে জীবনসঙ্গী করতে পেরে দীবাও গর্ববোধ করেন।

১৯৮২ সালের ১০ ডিসেম্বর তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মারদিনে জন্মগ্রহণ করেন সুলতান। জন্মের পর থেকেই হরমোনজনিত কারণে অস্বাভাবিকভাবে শারীরিক বৃদ্ধি হতে থাকে তার। তবে শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে শারীরিক বৃদ্ধি থামে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে ঠাঁই পাওয়া সুলতানের।

বান্ধবী যখন পুত্রবধূ!

পৃথিবীর সব দেশেই পুত্রবধূদের কাছে স্বামীর বাবা বা শ্বশুররা সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের সম্পর্ক অনেকটা বাবা-মেয়ের মতোই হয়ে থাকে। কিন্তু চীনে শ্বশুর আর পুত্রবধূর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছে। ফেসবুকের কল্যাণে এমন অসামাজিক ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। ফলে দীর্ঘদিনের ফেসবুক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ছেলের হাতে উত্তম মধ্যমের শিকার হয়েছেন বাবা ওয়াং।

৫৭ বছরের ওয়াংয়ের সঙ্গে অনলাইনে পরিচয় লিলির। সম্পর্কে তারা পুত্রবধূ আর শ্বশুর। কিন্তু ফেসবুকে দুজনেই নিজেদের পরিচয় গোপন রাখায় তাদের সম্পর্কটিও গোপন থাকে। এমনকি তারা দুজন দুজনকে যে ছবি পাঠান সেগুলোও ছিল অন্যের। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের জের ধরে তারা পরস্পরের সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। ওয়াং হেলংঝিয়াং প্রদেশের মুলিং শহরের এক হোটেলে রুম ভাড়া নেন বান্ধবী লিলির সঙ্গে দেখা করার জন্য।

এদিকে ওয়াংয়ের ছেলে এবং লিলির স্বামী ডা. জুন স্ত্রীর অনলাইন প্রেম সম্পর্কে জেনে যায়। স্ত্রীর ও তার প্রেমিককে হাতে নাতে ধরার জন্য সে লিলির পিছু নেয়। গন্তব্যে পৌঁছে তার তো চক্ষু চরক গাছ! লিলির বন্ধু যে আর কেউ নয়, স্বয়ং তার বাবা। রেগে গিয়ে জুন তার বাবা ও স্ত্রীকে পেটায়। এতে লিলির তিনটি দাঁত ভেঙে যায়।

দু’বছর আগের কথা। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ওয়াং ফেসবুকে তার সম্পর্কে লেখেন, ‘অন্যদের বুঝতে পারা ভালো।’ আর লিলি ফেসবুকে তার নিজের সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘নিসঃঙ্গ ফুল’। একদিন রাতে ফেসবুকে দু’জনার পরিচয় হয়। এরপর বন্ধুত্ব।

লিলি একজন গৃহবধূ। ছেলের দেখাশোনা ছাড়া সংসারে তার আর তেমন কাজ নেই। সময় কাটে ফেসবুকে চ্যাট করে। তার স্বামী ডা. জুন মালবাহী ট্রাক চালান। কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় বাইরে বাইরেই থাকতে হয় তাকে।

বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে ছবি আদান প্রদান করে ওয়াং আর লিলি। লিলি পাঠায় তার এক সুন্দরী বান্ধবীর ছবি। আর ওয়াং পাঠান তার এক বন্ধুর ছবি। ছবি দেখে দু’জন তো মহাখুশি। শুধু ছবি নয়। নিজেদের পরিচয় পর্যন্ত তারা গোপন রাখে।

ওয়াং নিজেকে একটি কোম্পানির পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করে জানান, দুই বছর আগে তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি একাই দিন কাটাচ্ছেন।

আর লিলি ওয়াংকে জানান, তার স্বামী পাঁচ বছর ধরে জেল খাটছে। আর সে তার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে নিঃসঙ্গ দিন গুজরান করছে।

সব মিলিয়ে দু’জনকে দু’জনার মনে ধরে। তারা এবার মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সন্ধ্যা ৬টায় তাদের সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত হয়।

কিন্তু যেদিন তাদের দেখা করার কথা সেদিনই হঠাৎ দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফেরে লিলির স্বামী জুন। সে ফেসবুক ঘেঁটে স্ত্রীর গোপন প্রণয় এবং তার ডেটিং সম্পর্কে জেনে যায়। তখন সে স্ত্রীকে হাতে নাতে পাকড়াও করতে মনে মনে ফন্দি আঁটে। সে ফোন করে বৌকে জানায়, তাকে এক্ষুণি আবার কাজে বেরুতে হবে।

লিলি তখন ছেলেকে তারা মায়ের বাসায় রেখে নিশ্চিন্ত মনে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বের হন। কিন্তু বান্ধবীকে অভ্যর্থণা জানাতে ওয়াং যখন হোটেল রুমের দরজা খুলেন তখন বিস্ময়ে হতবাক লিলি। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারই সম্মানিত শ্বশুরবাবা।

‘কিছু একটা ভুল হচ্ছে’ বলে দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়ে লিলি। কিন্তু যাবে আর কোথায়! তার গোয়েন্দা স্বামী যে তার পেছনেই ছিল! স্ত্রী আর বাবাকে একসঙ্গে দেখে তার মাথায় আগুন ধরে যায়। সে দু’জনকেই আচ্ছামতো পেটায়। এ পরস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন। তিনজনকেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তবে জিজ্ঞাসাবাদের পর শ্বশুর আর পুত্রবধূকে ছেড়ে দিলেও সম্মানিত বাবার গায়ে হাত তোলায় পাঁচ দিন কারাগারে থাকতে হচ্ছে জুনকে।

পুলিশের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে জুন বলেন, ‘সংসারের অভাব মেটাতে গিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে আমি যখন আধমরা হয়ে যাচ্ছি তখন এরা দুইজন ফূর্তি করে বেড়াচ্ছে।


- Copyright © Personal Blog - Tips Guru - Powered by Md Joy - Designed by Md Joy Chowdhury -